এইচএসসি 2021 সালের ষষ্ঠ সপ্তাহে নির্ধারিত ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন উল্লেখিত নির্দেশক এর পাঁচটি প্রশ্নের বিবরণ দিয়ে আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে ষষ্ঠ সপ্তাহের নির্ধারিত ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর তৈরি করে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে যা ছাত্র-ছাত্রীদের এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেতে সহযোগিতা প্রদান করবে। এইচএসসি 2021 ষষ্ঠ সপ্তাহ ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র এসাইনমেন্ট উত্তর পেতে নিচের অংশ ভালভাবে দেখুন।
এইচএসসি 2021 ইতিহাস ২য়-পত্র ৬ষ্ঠ সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর
চলুন দেরী না করে এইচএসসি 2021 সালের ইতিহাস ষষ্ঠ সপ্তাহের নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট এর পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেখে নেয়া যাক। নিচে প্রশ্নের ছবি এবং উক্ত ছবির নিচের অংশে উত্তর দেওয়া হল।
অ্যাসাইনমেন্টঃ
ফরাসি বিপ্লব সংঘটনে দার্শনিকদর ভূমিকা।
উত্তরঃ
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাঃ
প্রাক-বিপ্লবঃ ফ্রান্স ফরাসি বিপ্লব কোনাে আকস্মিক ঘটনা ছিল না। ফরাসি পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেই এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। পুরাতন সমাজব্যবস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে উন্নতির কোনাে স্বাদ এনে দিতে ব্যর্থ হয়। শােষণ নির্যাতন, বঞ্চনা ও হতাশায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিমজ্জিত ছিল। সামন্ত সমাজের পক্ষে জনগণকে শােষণ ও দারিদ্র ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার ছিল না। ফলে অর্থনীতি পঙ্গু হতে থাকে। সেই অবস্থায় পরিবর্তনের পক্ষে দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী লেখক সাহিত্যিকগণ জনগণকে সচেতন করার জন্যে তাদের লেখনী চালিয়ে যান। ফ্রান্সে গির্জাকে জনকল্যাণে ব্যবহারের দীর্ঘ দিনের চেষ্টা ব্যর্থ হতে থাকে। এ সবই পুরাতন রাজনীতি, সমাজ ও দৃষ্টিভঙ্গি। ফরাসি বিপ্লব এসবই পরিবর্তন করেছে। কীভাবেকরছে-তা জানা দরকার। সেসম্পর্কে জানতে হলে পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নতুন চিন্তার উন্মেষ কীভাবে ঘটেছিল তা জানা অপরিহার্য।
ক) সামাজিক অবস্থা:
ফ্রান্সসহ ইউরােপের তত্ত্বালীন সমাজ ব্যবস্থাকে পূর্বতন সমাজ’ বলা হয়ে থাকে। বিপ্লব এই পুরাতন ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন সমাজ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছিল। পুরাতন ফরাসি সমাজ তিনটি প্রধান সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। পুরাতন বাবস্থায় যাজকদেরকে প্রথম সম্প্রদায়, (First Estate) অভিজাতদের দ্বিতীয় সম্প্রদায় (Second Estate) এবং কৃষক, বুর্জোয়া, বণিক, শিক্ষক, শ্রমিকসহ সমাজের অপর গােষ্ঠীসমূহকে তৃতীয় সম্প্রদায় (Third Estate) বলা হতাে। ফ্রান্সের জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশই ছিল তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, বাকি মাত্র ৪ শতাংশ ছিল যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ভুক্ত। অবে দেশের সিংহভাগ সুযােগ-সুবিধা ভােগ করত যাজক ও অভিজাতরা। তারা সকলেই ছিল প্রায় সকল ধরনের কর প্রদান থেকে মুক্ত। গুরুত্বপূর্ণ পদ, সামরিক অফিসারসহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিচার বিভাগীয় এবং রাজস্ব ব্যবস্থার সাথে অভিজাত সম্প্রদায় গভীরভাবে জড়িত ছিল। এদেরকে অধিকার প্রাপ্ত (Privileged) এবং তৃতীয় সম্প্রদায়কে অধিকারহীন (Non – privileged) বলে অভিহিত করা হতাে। ফ্রান্সে বিপ্লবের আগে যাজকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ত্রিশ হাজার এবং অভিজাত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল তিন লাখ পঞ্চাশ হাজারের মতাে।
ধর্মযাজকদের মধ্যেও কিছু স্তর এবং প্রকা প্রকারভেদ ছিল। কালাে ও সাদা পােশাকধারী প্রধান এ দুই ভাগে এদেরকে বিভক্ত করা হতাে। পুরাতন ব্যবস্থার শেষের দিকে কালাে পােশাকধারী যাজকের সংখ্যা ৬০ হাজারে নেমে আসে। এ কারণে যে, এদের ওপর প্রভাবশালী অভিজাতদের খবরদারিত্ব বেড়ে যায়। উর্ধ্বতন যাজকরা অভিজাতদের মতই অতিরিক্ত সুযােগ-সুবিধা ভােগ করতেন। বিশপ, মঠাধ্যক্ষ এবং ক্যাননের সংখ্যাও ছিল প্রায় ১০ হাজারের মতাে। দেশের সর্বোচ্চ যাজকদের বিশপ বলা হতাে বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে ১৩৯ জন বিশপ ছিলেন। নিম্নতর যাজকদের মধ্যে, যেমন কুরে ও ভিকার নামে যারা পরিচিত ছিলেন তারা তৃতীয় সম্প্রদায়ের মতােই অধিকারহীন ছিলেন। অভিজাতদেরকে গােত্র, সামরিক, নৌ এবং আমলা ইত্যাদি অভিধায় বিভক্ত করা হয়েছিল। গােত্রভুক্ত অভিজতের সংখ্যা ছিল এক লাখ দশ হাজারের মতাে। অপরাপর অভিলাতের সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। পূর্বতন ব্যবস্থায় কৃষকদের অবস্থা এক রকম ছিল না। তাদের মধ্যেও ছিল নানা স্তরভেদ। কেউ স্বাধীন কৃষক, কেউ সামান্য সমমির মালিক, কেউ প্রজা, ক্ষেতমজুর বা চাষি ছিল।
খ) অথনৈতিক ব্যবস্থা:
আঠারাে শতকে ফ্রান্স ছিল মূলত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বমুহূর্তে ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যা ছিল দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ। এর মধ্যে দুই কোটি দশ লাখ যুক্ত ছিল কৃষি কাজের সাথে। তবে সেই সময়ে ফ্রান্সে কয়েকটি শহর বেশ দ্রুত শিল্প উৎপাদন ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণের ফলে ব্যাপক জনবসতিতে ভরে ওঠে। বিপ্লবের প্রাক্কালে প্যারিতে ছয় লাখ, লিওতে এক লাখ পয়ত্রিশ হাজার এবং মার্সেল নব্বই হাজার ফরাসি নাগরিক বসবাস করত। ফ্রান্সের জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের চেয়ে কৃষির অবদানই ছিল বেশি। ১৭৮৯-এ ফ্রালের জাতীয় আয় কৃষি থেকে লাভ করেছে ১৮২৬ মিলিয়ন ভ্রিা এবং শিল্প থেকে মাত্র ৫২৫ মিলিয়ন লিস্রা। বিপ্লব -পূর্ব ফ্লাপে দুই পদ্ধতির কর ব্যবস্থা চালু ছিল
১) প্রত্যক্ষ কর ও
(২) পরােক্ষ কর।
রাজনৈতিক অবস্থা:
পুরাতন ব্যবস্থায় ফ্রান্সের রাজতন্ত্র স্বৈরতান্ত্রিক রূপ ধারণ করে। রাজতন্ত্র ধর্মযাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়কে হাতে রেখে দেশের শতকরা ৯৬ জন মানুষকে নির্মমভাবে শশাষণ করতে থাকে। ধর্ম যাজকরা রাজাকে দেবতার প্রতিনিধি বলে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুযােগ-সুবিধা লাভ করত। এর ফলে রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা রাষ্ট্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষত চতুর্দশ লুই (১৬৪৩-১৭১৫খ্রি.) রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফ্রান্সে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হন।
তিনি ছিলেন চরম স্বৈরাচারী এবং দর্প করে বলতেন, “আমিই রাষ্ট্র” ( am the state)। দেশের আইন প্রণয়ন, প্রশাসন পরিচালনা ও বিচার কার্যে রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনীর সর্বময় ক্ষমতা রাজার হাতে থাকায় যুদ্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা রাজার ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয় হয়ে পড়ে। পনেরতম লুই (১৭১৫-১৭৭৪ খ্রি) এবং ষােড়শ লুই (১৭৭৪-১৭৮৯ খ্রি.) ফ্রান্সের রাজতন্ত্রকে আরাে নিরঙ্কুশ করার ধারা অব্যাহত রাখেন। তবে ষােড়শ লুই শেষ দিকে ফরাসি রাজতন্ত্রে গভীর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। রাজতন্ত্রের সীমাহীন ক্ষমতার কারণেই ১৬১৪ সাল থেকে ফ্রান্সের স্টেটস-জেনারেল নামক সর্বোচ্চ প্রতিনিধি পরিষদ অকার্যকর হয়েছিল। মাঝে মাঝে ধনীদের নিয়ে রাজাগণ বসতেন, সভা করতেন। অধিকাংশ প্রদেশেই স্থানীয় প্রতিনিধিদের তেমন কোনাে গুরুত্ব দেওয়া হতাে না।
প্যারির পার্লামেন্ট এবং রাজকীয় বিচারালয়গুলাে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কারণে কোনাে স্বাধীন মতামত প্রদান করতে পারত না। রাজার হাতে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ন্যস্ত থাকায় দেশের স্থানীয় শাসন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় শাসনে রাজ পরিষদ, এবং ছয় জনের একটি মন্ত্রিসভা কার্যকর ছিল। সর্বত্রই ব্যক্তিস্বার্থ, স্বেচ্ছাচার, দুর্নীতি ও অমিতব্যয়িতার বিস্তার ঘটার ফলে পুরাতন ব্যবস্থা মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। ফ্রান্সে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হতে থাকে। ১৭৭০-এর পর থেকে এই অবনতি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। জাতীয় ঋণ ১৭৭৪-এ দেড় বিলিয়ন থেকে ১৭৮৮-এ সাড়ে চার বিলিয়ন লিভ্রায় উন্নীত হয়। ১৭৭৪ সালে বাজেট ঘাটতি ছিল ২৮ মিলিয়ন লিভ্রা, ১৭৮৮ সালে তা বেড়ে ১২৬ মিলিয়ন লিভ্রায় দাঁড়ায় (ব্যয় ছিল ৬২৯ মিলিয়ন লিভ্রা, আয় ছিল ৫০৩ মিলিয়ন লিভ্রা)। রাজ পরিবারের ব্যয়ও বেড়ে যায়। রাজার জন্য ছিল ১৮৫৭ টি ঘােড়া, ১৪০০ জন চাকর-চাকরানি। বিভিন্ন প্রদেশে আরও ১২০০ টি ঘােড়া রাজার শিকারের জন্য প্রস্তুত রাখা হতাে। রাজার মৃগয়া গমনের জানা ছিল ২১৭ টি গাড়ির বহর। বােলতম লুইয়ের স্ত্রী রাণি মরিয়া আতােয়াত প্রায়ই নতুন নতুন প্রাসাদ তৈরির বায়না ধরতেন। এদিকে ১৭৮৮ সালে ফ্রান্সে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়। কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়, পশুর মড়ক লেগে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। শহরগুলােতে কাজের সন্ধানে বেকারদের ভিড় জমতে থাকে। ১৭৮৮ – এর তুলনায় ১৭৮৯তে বিক্ষোভ পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এসব বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়। ফ্রান্স কার্যতই একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখােমুখি এসে দাঁড়ায়। পরিবর্তনের বস্তুগত সকল উপাদানই তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে তৈরি হয়েছিল। এর সাথে বিপ্লবের জন্য যে ব্যাপক চেতনাগত প্রস্তুতির দরকার তাও ফ্রান্সে তৈরি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিককবি সাহিত্যিকসহ বুদ্ধিজীবী সমাজ পরিবর্তন তথা বিপ্লবের নতুনচেতনা তৈরিতে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখেন।
ফরাসি বিপ্লব সংঘটনে দার্শনিকগনের ভূমিকাঃ
দার্শনিকদের ভূমিকা – মন্তে (Montesquleu) : অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দার্শনিকদের মন্তেষ্ক এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থাদি মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন মন্তেষ্ক। পেশায় আইনজীবী মন্তেস্কু ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা। তিনি তার বিখ্যাত ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ (The Spirit of Laws)-এ রাজার দৈবস্বত্ব নীতির সমালােচনা করে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইন, শাসন ও বিচারবিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেন। মন্তেস্কুর আর-একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ (The Persian Letters)। এই গ্রন্থে তিনি বিপ্লব-পূর্ব ফরাসি সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালােচনা করেন।
এদিকে ১৭৮৮ সালে ফ্রান্সে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়। কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়, পশুর মড়ক লেগে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। শহরগুলােতে কাজের সন্ধানে বেকারদের ভিড় জমতে থাকে। ১৭৮৮ – এর তুলনায় ১৭৮৯তে বিক্ষোভ পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এসব বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়। ফ্রান্স কার্যতই একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখােমুখি এসে দাঁড়ায়। পরিবর্তনের বস্তুগত সকল উপাদানই তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে তৈরি হয়েছিল। এর সাথে বিপ্লবের জন্য যে ব্যাপক চেতনাগত প্রস্তুতির দরকার তাও ফ্রান্সে তৈরি হয়েছিল। ফ্রান্সের দার্শনিককবি সাহিত্যিকসহ বুদ্ধিজীবী সমাজ পরিবর্তন তথা বিপ্লবের নতুনচেতনা তৈরিতে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখেন। ফরাসিদের চিন্তাধারায় ব্যাপক আলােড়নের সৃষ্টি হয়। দিদেরাে বলেছেন, মানুষ তার চারপাশের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করতে পারে বলেই সে জীবজগতে শ্রেষ্ঠ। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফরাসি জাতি নিজ ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
ফিজিওক্র্যাটস (Physiocrats) : ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফিজিওক্র্যাটস নামে একদল অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়। এঁরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অবাধ বাণিজ্য ও শিল্পবেসরকারিকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। এই গােষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন কুয়েসনে।
ফরাসি বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহঃ
অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রাজার প্রয়ােজন হয়ে পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের। সেই অর্থ পেতে হলে। কর ধার্য করা ব্যতীত রাজার কাছে অন্য কোনাে পথ খােলা ছিল না। অর্থ সচিব নেকার রাজাকে স্টেটসজেনারেলের অধিবেশন ডেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। সুযােগ বুঝে তৃতীয় সম্প্রদায় তাদের সদস্য সংখ্যা যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান করার দাবি জানালে ১৭৮৮-এর ডিসেম্বরে রাজা তা মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৭৮৯ – এর ৫ মে স্টেটস – জেনারেলের অধিবেশন ডাকা হয়। ১৭৫ বছর পর ফ্রান্সে এই সংসদ ভার্সাই নগরীতে নতুন করে শুরু করার ঘােষণা দেয়া হয়। এতে যাজক সম্প্রদায়ের ৩০০, অভিজাতদের ৩০০ এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের একা ৬০০ প্রতিনিধি থাকার বিধান স্বীকৃত হয়।
এপ্রিলের শেষ দিকে স্টেটস – জেনারেলের নির্বাচনে যাজকদের জন্য নির্ধারিত ৩০০ জনের মধ্যে ২৯১ জন, অভিজাতদের ৩০০ জনের মধ্যে ২৭০ জন এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের ৬০০ জনের মধ্যে ৫৭৮ জন সদস্য নির্বাচিত হলে মােট ১১৩৯ জন সদস্য উক্ত অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। মৃত্যুবরণ,দাঙ্গাহাঙ্গামা ও অন্যান্য কারণে বাকি ৬১ টি আসনের প্রতিনিধি উক্ত সময়ে নির্বাচিত হতে পারেননি। রাজা এবং অর্থসচিব নেকার উভয়েই স্টেটস-জেনারেলের কাছে কর আদায়ের প্রস্তাব রাখেন। সংসদে তৃতীয় সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও রাজা শুধু ধর্ম যাজক এবং অভিজাত প্রতিনিধিদের সাথেই মিলিত হলে তৃতীয় সম্প্রদায় অপমানিত বােধ করেন।
১৭ জুন তাঁরা নিজেদেরকে সমগ্র জনগণের প্রতিনিধি এবং স্টেটস – জেনারেলকে জাতীয় সভা’ বলে ঘােষণা করে। এ নিয়ে রাজা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বিরােধ বাড়তে থাকে। ২০ জুন প্রতিনিধিরা সভাকক্ষে ঢুকতে না পেরে’ টেনিস কোর্টে সমবেত হয়ে একটি শপথ গ্রহণ করেন। উক্ত শপথে বলা ছিল যে, যতদিন টেনিস কোর্ট একটি সংবিধান রচিত না হবে ততদিন তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা একত্রে থাকবে। এশপথকে টেনিস কোর্টের শপথ” বলা হয়ে থাকে। ইতােমধ্যে যাজক ও অভিজাত প্রতিনিধিদের একটি অংশ নৈতিকভাবে তৃতীয় সম্প্রদায়ের শপথকে সমর্থন প্রদান করেন। রাজা অবস্থা বেগতিক দেখে কিছু কিছু শর্ত মেনে নিলেও যড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকেন। ১২ জুলাই রাজা অর্থসচিব নেকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
বিশ্বে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবঃ
ফরাসী বিপ্লব ইউরােপ এবং নতুন বিশ্বের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল, মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনের নির্ণায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি সামন্তবাদের অবসান ঘটায় এবং পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তিগত মুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছিল। বিপ্লববাদ ও সমাজতন্ত্র প্রাচীন রােমের বিপ্লবী গ্রাকাসের নাম গ্রহণ করেছিলেন সােয়া নােয়েল ব্যাবুফ। গ্রাকসব্যানুফ, দার্থে সিলভা মারেশাল ও আরাে কয়েকজন একত্রে একটি ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন যা সমানপন্থিদের ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত হয়েছে। অবশ্য ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। ব্যাবু দার্থে এবং আরাে অনেকে পরের বছর এসব কারণে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
ফরাসি বিপ্লবের মূল লক্ষ্য সমাজতন্ত্র ছিলাে না যদিও সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের সূতিকাগার ছিলাে সেটিই। ভােগের সাম্য এবং উৎপাদনের সাম্য, দুই ধরনের চিন্তাই ফরাসি বিপ্লবে দেখা যায়। জ্যাকবিনের কারণটি সাম্য, দুই ধরনের চিন্তাই ফরাসি বিপ্লবে দেখা যায়। জ্যাকবিনের কারণটি মার্কসবাদীরা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রহণ করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে কমিউনিস্ট চিন্তার উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সােভিয়েত ইউনিয়নে “গ্রাক্কাস” ব্যাবুফনায়ক হিসাবে গণ্য করা হত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ ফরাসি বিপ্লব আমেরিকান রাজনীতিকে গভীরভাবে মেরুকৃত করেছিল এবং এই মেরুকরণের ফলে প্রথম পার্টি সিস্টেম তৈরি হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে, ইউরােপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেটমাস জেফারসনের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি ফ্রান্সের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ১৭৭৮ সালে সম্পাদিত চুক্তিটি সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছিলেন যে সেটি তখনও কার্যকর ছিল। জেফারসনসহ জর্জ ওয়াশিংটন এবং তার মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এই চুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে প্রবেশের জন্য আবদ্ধ করে না।