বিপণন কার্যাবলি বিশ্লেষণ। এইচএসসি ব্যাচ 2021 উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র [৬ষ্ঠ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান।

এইচএসসি 2021 সালের ষষ্ঠ সপ্তাহের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন অ্যাসাইনমেন্ট এর পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। এইচএসসি 2021 সালে যে সকল শিক্ষার্থীর এখনো পর্যন্ত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন অথবা উত্তর কোনটি পান নাই তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আপনার ষষ্ঠ সপ্তাহের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে এর নির্দেশক অংশের পাঁচটি প্রশ্নের আলাদা আলাদা ভাবে উত্তর প্রদান করেছি। ফলে আপনি আপনার উৎপাদন ব্যবস্থাপনা অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর ডাউনলোড করে নিতে পারছে। উত্তর পেতে নিচের অংশ ভালভাবে পড়ুন।

এইচএসসি 2021 উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

নিচে এইচএসসি 2021 ষষ্ঠ সপ্তাহের নির্ধারিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন ছবি এবং ছবির নিচে উত্তর দেওয়া হল।

অ্যাসাইনমেন্টঃ

বিপণন কার্যাবলি বিশ্লেষণ।

উত্তরঃ

(ক) বিপণন কার্যাবলির ধারণাঃ

সাধারণ লােকজন বিপণন কার্য বলতে শুধুমাত্র ক্রয় ও বিক্রয়কেই বুঝে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিপণন কার্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বিপণন কার্যাবলীকে এমন কতগুলাে কাজ বা সেবার সমষ্টি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যা উৎপাদকের নিকট থেকে ভােক্তা ককত্ব বা ব্যবহারকারীর নিকট পণ্য বা সেবার প্রবাহ পরিচালিত করার প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ উৎপাদক ও ভােক্তার মধ্যে পণ্য ও সেবার আদান-প্রদানে যেসব কার্যাবলি জড়িত থাকে সেগুলাে বিপণন কার্যের আওতায় পড়ে। একটি বিপণন কার্য উৎপাদক নিজে কিংবা মধ্যস্থ ব্যবসায়ী (পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার) বা ভােক্তারা সম্পাদন করতে পারে।

বিপণন কার্যাবলি উৎপাদক ও ভােক্তার মধ্যবর্তী পর্যায়ে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সম্পাদিত হয়ে থাকে। বিপণন কার্যাবলির সাথে পণ্যের স্বত্ত্ব পরিবর্তন,পণ্যের হস্তান্তর, পণ্যের সংরক্ষণ, পণ্যের প্রসারসহ ইত্যাদি জড়িত। বিপণন পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে বিপণন কার্যাবলি নিয়মিত বিশ্লেষণ করা প্রয়ােজন। কারণ এর করা প্রয়ােজন। কারণ এর মাধ্যমে বিপণন-দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। সাধারণত বিপণনে ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ, অর্থসংস্থান, মােড়কীকরণ, ঝুঁকি-বহন, বাজার তথ্য সংগ্রহ, মূল্য নির্ধারণ, পণ্যের প্রসার ইত্যাদি কাজ সম্পাদিত হয়।

(খ) ক্রয় ও বিক্রয়ের ধারণা ও গুরুত্বঃ

ক্রয়ের ধারণাঃ

সাধারণ অর্থে, একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রয়’ হলাে ভােক্তার চাহিদা পূরণ করার জন্য সরবরাহকারীর নিকট থেকে প্রয়ােজনীয় পণ্য সংগ্রহ। বিপণনের ক্ষেত্রে ক্রয়কার্য কয়েকটি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। সে কে। সেগুলাে হলাে:

(ক) পণ্যের প্রয়ােজন নির্ধারণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

(খ) সঠিক সরবরাহের উৎস নির্বাচন;

(গ) পণ্যের উপযুক্ততা যাচাইকরণ

(ঘ) পণ্যের মূল্য, ডেলিভারী ইত্যাদি সংক্রান্ত শর্ত নিরূপণ এবং

(ঙ) স্বত্ব হস্তান্তর। পণ্য ক্রয় করার পূর্বে ক্রেতাকে পণ্যের প্রয়ােজনীয়তা নির্ধারণ করতে হয়।

তাকে তার প্রয়ােজনীয় পণ্যের প্রকার, পরিমাণ ও গুণাগুণ নির্ণয় করে তা সংগ্রহের পন্থা নির্বাচন করতে হয়। ক্রেতাকে যখন নিজের উদ্যোগে সরবরাহের উৎস খুঁজে বের করতে হয় তখন বিরাজমান পরিস্থিতিকে বলা হয় বিক্রেতার বাজার। অপরদিকে, বিক্রেতা পণ্যের উৎস সম্পর্কে ক্রেতাদের জানানাের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে তখন তা ক্রেতারবাজার (Buyers’ market) নামে অভিহিত হয়। পণ্যের উৎস নির্বাচনের পর ক্রেতাকে তার প্রয়ােজনের সাথে সংগতি রেখে পণ্যের উপযােগিতা যাচাই করে দেখতে হয়। ক্রয় কার্যের সর্বশেষ ধাপ হলাে পণ্যের মূল্য ও বিক্রয় শর্তাদি নিরূপন।

ক্রয়ের গুরুত্বঃ

নিচে ক্রয়ের ৫ টি গুরুত্ব যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হলােঃ

(১) ভােক্তা যেসময়ে ও যে স্থানে পণ্য ক্রয় করতে চায় সেসময় পণ্য বা সেবা বিপণনকারী পণ্য সরবরাহ করে।

(২) পণ্যের সঠিক মান ও মূল্য বজায় রেখে বিপণনকারী পণ্য বাজারে সরবরাহ করে যেন ভােক্তা সহজে পণ্য ক্রয় করতে পারে।

৩) ভােক্তার প্রত্যাশা ও চাহিদার বিভিন্নতা অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করে, সেই পণ্য বাজারে সরবরাহ করার ফলে ক্রেতা বা ভােক্তা উপযুক্ত পণ্য ক্রয় করতে পারে।

(৪) ভােক্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে ভােক্তার নিকট মানসম্মত পণ্য যথাযথ মূল্যে সঠিক স্থানে সহজলভ্য করা হয়। মগয়ে গেলে নিশু মল গুগ যখন

(৫) বিপণনকারী ভােক্তার ক্রয় নিশ্চিত করার জন্য ভােক্তার চাহিদা আগেই নিরূপন করে পণ্য প্রস্তুত করে রাখে, আবার পণ্য সংরক্ষণও করে।

বিক্রয়ের ধারণাঃ

বিক্রয় বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য। বিক্রয় কার্য শুধু পণ্যের স্বত্ব হস্তান্তরের সাথেই জড়িত নয়; চাহিদা সৃষ্টি, ক্রেতা অনুসন্ধান, ক্রেতার প্রয়ােজনের সাথে বিক্রেতার পণ্যের সামঞ্জস্য বিধান এবং বিক্রয় সংক্রান্ত শর্তাদি নিরূপণ এর অন্তর্ভূক্ত। বিক্রেতা ক্রেতার অবচেতন মনে পণ্যের সুপ্ত প্রয়ােজনীয়তাউদ্দীপ্ত করে তােলে ও সক্রিয় চাহিদার সৃষ্টি করে। চাহিদা সৃষ্টির জন্য সে বিভিন্ন প্রসার মাধ্যম ব্যবহার করে (যেমন বিজ্ঞাপন বিক্রয় প্রসার, ব্যক্তিক বিক্রয় ও জনসংযােগ)। চূড়ান্ত বিক্রয়কার্য সম্পাদনের জন্য চাহিদা সৃষ্টিই যথেষ্ট নয়, পণ্য ক্রয়ের জন্য কাঙ্খিত ক্রেতাও খুঁজে বের করতে হয়। ক্রেতা অনুসন্ধানের জন্য বিক্রেতা বিক্রয়কর্মী নিয়ােগ করে, সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট পণ্য তালিকা প্রেরণ করে, টেলিফোনে যােগাযােগ করে, পাইকারী বা খুচরা দোকানে পণ্য সরবরাহ করে, রে (যেমন বিজ্ঞাপন পরিবেশক নিয়ােগকরে এবং আকর্ষণীয় পণ্য সজ্জার ব্যবস্থা করে।

ক্রেতা অনুসন্ধান করার পর বিক্রেতা ক্রেতার প্রয়ােজনের সাথে নিজের পণ্য খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য বাজার গবেষণা, বিক্রয় পর্যবেক্ষণ এবং বিক্রয়কর্মী ও অন্যান্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্রেতার পছন্দ-অপছন্দ নির্ণয় করে। ক্রেতাদের সর্বাধিক সন্তুষ্টি বিধান করে অব্যাহত সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তাদের চাহিদা ও পছন্দ অপছন্দের সাথে পণ্যের ডিজাইন, আকার, রং, মডেল ও প্যাকিংརིག ཙ ག་ གས་ এর সামঞ্জস্যবিধান অপরিহার্য। বিক্রেতা বিক্রয়ের শর্তাদিও নিরূপন করে। মূল্য পরিশােধের সময়, পরিশােধের নিয়ম, বাট্টা বা কমিশনের হার, পণ্য ডেলিভারীর তারিখ, প্রদেয় মূল্য ইত্যাদি সম্পর্কিত শর্তাবলি ঠিকঠাক হওয়ার পর বিক্রেতার নিকট থেকে ক্রেতার নিকট পণ্যের স্বত্ব হস্তান্তরিত হয়।

বিক্রয়ের গুরুত্বঃ

(১) বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি স্থানে একত্রিত হতে পারে। বিক্রেতা পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে জানাতে পারে, আবার ক্রেতার কাছ থেকে পণ্য সম্পর্কে অভিব্যক্তিও জানতে পারে।

(২) বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পণ্য বা সেবার মালিকানার বিনিময় হয়। তাই বিক্রয় বিপণন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিগেন কার্যক্রমের লেবপুর্ণ অংশ।

(৩) ভােক্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য বিপণনকারী ক্রেতা বা ভােক্তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করে বিক্রয়ের মাধ্যমে।

(৪) বিক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে বিপণনকারী প্রকৃত ক্রেতা সৃষ্টি করতে পারে, আবার স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তর করতে পারে।

(৫) পণ্য প্রস্তুত করার পর পণ্য বিক্রয় করে বিপণনকারী বাজারে চাহিদা ও যােগানের মধ্যে সমতা রাখতে পারে।

(গ) পরিবহন ও গুদামজাতকরণের ধারণা ও সুবিধাঃ

পরিবহনের ধারণাঃ যেখানে পণ্য উৎপাদিত হয় সেখান থেকে যে স্থানে পণ্য ভােগ হয় সে স্থানে পণ্য স্থানান্তর করে পরিবহন স্থানগত উপযােগ সৃষ্টি করে। পরিবহন বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা বাজারের পরিধি স্থানীয় এলাকা থেকে দূর অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে, জাতীয় বাজারের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবশের সুযােগ করে দেয়, ভােক্তাদের পণ্য ভােগে বৈচিত্র্য আনয়ন করে, বিপণন ব্যয় হ্রাস করে এবং পণ্যেরহস্তান্তর দ্রুত করে। উন্নত পরিবহন প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য পণ্য উৎপাদনে বিশেষায়িত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে যা আন্তঃআঞ্চলিক উন্নয়নে ভারসাম্য সৃষ্টির সহায়ক। উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে দূরত্ব যত বেশি হবে পরিবহনের গুরুত্বও তত বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন কেন্দ্রে পণ্য প্রেরণের জন্য বিভিন্ন প্রকার পরিবহন ব্যবহৃত হয়, যথা

(ক) স্থল পরিবহন (রেল ও সড়ক পথ),

(খ) জল পরিবহন (নৌপথ ও সামুদ্রিক পথ) এবং

(গ) বিমান পরিবহন। বিমান পরিবহন খুবই ব্যয়সাধ্য বলে পণ্য পরিবহনে স্থল এবং জল পথই সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।

পরিবহনের সুবিধাঃ

(১) পণ্য উৎপাদকের লকের নিকট থেকে ক্রেতা বা ভােক্তার কাছে পৌছে দিয়ে পরিবহন স্থানগত উপযােগ সৃষ্টি করে। নিগত উপতে

(২) পরিবহনের মাধ্যমে সঠিক সময়ে উৎপাদকের কাছ থেকে ক্রেতা বা ভােক্তার কাছে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

(৩) ভােক্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিপণনকারী মানসম্মত পণ্য, সঠিক মূল্যে সরবরাহ করার সাথে

(৪) পরিবহনের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে যােগাযােগ স্থাপিত হয়।

(৫) উৎপাদকের কাছ উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হয় ফলে উৎপাদক পণ্য বন্টনের ব্যাপারে চিন্তামুক্ত থাকে।

গুদামজাতকরণের ধারণাঃ

সভ্যতার বিকাশ ঘটার সাথে সাথে পণ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটল। আর এ সাথে প্রয়ােজন দেখা দিল পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণের। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্য ভবিষ্যতের প্রয়ােজন মেটানাে ও নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গুদামজাতকরণের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। গুদামজাতকরণ (বা পণ্য সংরক্ষণ) বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পণ্য উৎপাদনের পর ব্যবহার হওয়া পর্যন্ত মজুদ করে গুদামজাতকরণ সময়গত উপযােগ (Time utility) সৃষ্টি করে। বিপণনের প্রায় প্রত্যেক পর্যায়েই পণ্য সংরক্ষণের প্রয়ােজন হয়। পণ্যের উৎপাদন ও চূড়ান্ত বিক্রয়ের মধ্যবর্তী সময়ে সঠিক অবস্থায় পণ্য নিরাপদে রাখাকেই সংরক্ষণ বলা যায়। সংরক্ষণ কার্য বন্টন প্রণালির প্রায় সর্বস্তরেই সম্পাদিত হয়ে থাকে। উৎপাদক যেমন তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দেয়, ঠিক অনুরূপভাবে পরিবহন এজেন্সী, পণ্যাগার কর্তৃপক্ষ এবং পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মতাে অন্যান্য মধ্যস্থব্যবসায়ীগণও পণ্য সংরক্ষণ করে থাকে।

গুদামজাতকরণের সুবিধাঃ

(১) পণ্য সংরক্ষণ করে মৌসুমের বাড়তি উৎপাদন বছরের অন্যান্য সময়ে ব্যবহারের জন্য ধরে রাখা যায়। তাই সংরক্ষণের মাধ্যমে সময়গত উপযােগের সৃষ্টি হয়।

(২) পণ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক উত্থান-পতনের প্রতিকূলতা মােকাবেলা করা যায়। যখন ব্যবসায় মন্দা চলতে থাকে, তখন উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করা হলে তা উৎপাদনের বর্তমান গতি লতল অব্যাহত রাখে।

(৩) পণ্য সংরক্ষণ করে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় বিধান করা যায়। চাহিদা ও সরবরাহের এরূপ সমন্বয় বাজারে পণ্যের উঠা-নামা হ্রাস করে, ফলে মূল্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

(৪) সাধারণত পণ্য সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বহুল পরিমাণে পণ্য একত্রিত করে। অধিক পণ্য সংগ্রহ এবং গুদাম ঘরে সরবরাহ করার ফলে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পায়।

(৫) স্বনামধন্য পণ্যাগারে পণ্য সংরক্ষণ করে পণ্যের মালিক মালিকানার সাথে জড়িত কতিপয় ঝুঁকি হাস করতে পারে। পণ্যাগার কর্তৃপক্ষ ঝুঁকির কিছু অংশ নিজেই বহন করে।

(ঘ) প্রমিতকরণ ও পযায়িতকরণের ধারণা ও সুবিধা প্রমিতকরণের ধারণাঃ

ইংরেজি Standardization শব্দটির আভিধানিক অর্থ প্রমিতকরণ বা মান নির্ধারণ। মান বা (Standard) শব্দটি থেকে মান নির্ধারণ কথাটির উৎপত্তি। মান’ হলাে যেকোন কিছুর গুণাগুণের (Quality) একটি পরিমাপ। এর মধ্যে নিহিত থাকে সমরূপতার (Uniformity) ধারণা। বিপণন শাস্ত্রে মান বলতে কোন দ্রব্যের বাহ্যিক বা নৈসর্গিক মানকে (Physical) বুঝায়। যেকোন পণ্যদ্রব্যের ওজন, আকার, মজবুতি, রং বা বর্ণ, স্থায়িত্ব, অবয়ব বা অন্যান্য বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য মানএর অন্তর্ভুক্ত। প্রমিতকরণ স্ট্যান্ডার্ড বা মানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। প্রমিতকরণ হচ্ছে কতিপয় নির্ণায়ক (Criteria) নির্ধারণ করা, যার সাথে পণ্যদ্রব্যের হুবহু মিল থাকবে। আর বাহ্যিক মানসমূহই হলাে নির্ণায়ক। যখন কোন একটি পণ্য প্রমিতকরণ করা হয়, তখন এ দ্বারা বুঝানাে হয় যে নির্দিষ্ট মানের সাথে পণ্যের সাদৃশ্য রয়েছে। আরও সােজা কথায় বলা যায়, পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান স্থির করাই হচ্ছে মান নির্ধারণ বা প্রমিতকরণ। পণ্যদ্রব্যের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মান এর উপর ভিত্তি করে। নির্ধারণ করা হয়। সুনির্দিষ্ট মান স্থির করার পর পণ্যদ্রব্য পর্যায়িত করা হয়।

প্রমিতকরণের সুবিধাঃ

(১) পণ্য বিপণনে সুবিধার জন্য প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ, আকার, ওজন ইত্যাদি অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।

(২) নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রমিতকরণে পণ্যের মান নির্ধারণ করা হয়।

(৩) পণ্যের মানের বিভিন্নতা অনুযায়ী প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যকে ভাগ করা হয় বলে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী পণ্যকে সংরক্ষণ, পরিবহন, বিজ্ঞাপনসহ ইত্যাদি বিপণনকার্য সম্পাদন করা হয়।

(৪) বিভিন্ন মানের পণ্য বাজারে থাকার কারণে ক্রেতা বা ভােক্তা তার সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করতে পারে, ফলে ক্রেতা বা ভােক্তার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

(৫) পণ্যের মান নির্ধারিত থাকলে পণ্যের গুণগত মান, আকার ইত্যাদি অনুযায়ী মােড়কিকরণের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।

পর্যায়িতকরণের ধারণাঃ

প্রমিতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতিপয় মান স্থির করা হয়। প্রতিষ্ঠিত মানসমূহকে ‘ গ্রেড’ বলা হয়। এসব মান বা গ্রেডের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য ও শিল্পজাত পণ্যকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। একইরূপ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পণ্যদ্রব্যের শ্রেণী বিভাজন প্রক্রিয়াকে বলা হয় পর্যায়িতকরণ। পূর্বনির্ধারিত মান পর্যায়িতকরণের মূল ভিত্তি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পর্যায়িতকরণ ও প্রমিতকরণ একটি অপরটির সাথে জড়িত- একটিকে ছাড়া অপরটি অচল। প্রমিতকরণ ব্যতীত পর্যায়িতকরণ অর্থহীন, তেমনি পর্যায়িতকরণ ব্যতীত প্রমিতকরণ বা মান নির্ধারণ সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় একইরূপ গুণাগুণ সম্পন্ন পণ্যের কোন্ মানের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে তা নির্ণয় করার একটি পন্থা হলাে পণ্যের পর্যায়িতকরণ। উদাহরণস্বরূপ, আলু ব্যবসায়ী আলুকে চাষের উৎপত্তি স্থান বা আকার অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করতে পারে।

পর্যায়িতকরণের সুবিধাঃ

(১) বিক্রয়ের পূর্বে পণ্য পর্যায়িতকরণ করে নিলে সেই অনুযায়ী বিক্রয়ের কাজ তুলনামূলকভাবে সহজে করা যায়।

(২) ক্রেতা বা ভােক্তাদের বিভিন্নতার কারণে একই ধরনের পণ্য দিয়ে তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। তাই পৰ্যায়িতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রেতা বা ভােক্তার বিভিন্ন প্রয়ােজন বা চাহিদা পূরণ

(৩) পণ্য পর্যায়িতকরণের ফলে ক্রেতা ও ভােক্তাদের মধ্যে বিপণনকারী সম্পর্কে অনুকূল ধারণা তৈরি করা যায়।

(৪) প্রমিতকরণ অনুযায়ী পণ্য পর্যায়িতকরণের ফলে মানের বিভিন্নতা অনুযায়ী সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

(৫) পণ্যের প্যায়িতকরণ করা থাকলে পণ্যের ভিন্নতা অনুযায়ী অভিষ্ট ভােক্তা সনাক্ত করে তাদের ভষ্ট ভেজা সনাক্ত করে তালে কাছে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

(ঙ) মােড়কিকরণের ধারণা ও গুরুত্বঃ

মােড়কিকরণের ধারণাঃ সাধারণ অর্থে, মােড়কিকরণ হলাে পণ্যকে বিপণনযােগ্য করার জন্য প্যাকিং বা মােড়ক-বাঁধাই করার কাজ। শিল্পজাত পণ্যের ক্ষেত্রে মােড়ক-বাঁধাই অধিক প্রয়ােজনীয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে পাস্তুরিত দুধ, মাছ-মাংস ইত্যাদি প্যাকিং করে (প্রক্রিয়াজাতের পর) বিক্রয় করা হয়। কেবলমাত্র বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষার জন্য পণ্য প্যাকিং করা হয় না, পণ্যকে ভােক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট আকর্ষণীয় করে তােলাও মােড়কিকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। সুতরাং, মােড়কিকরণ হলাে পণ্যের নির্দিষ্টমান| সংরক্ষণ, পরিবহন ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পণ্যের মােড়ক নির্ধারণ, নক্সাকরণ, উন্নয়ন ও পণ্যের গায়ে লাগানাের সাথে জড়িত সকল কাজের সমষ্টি।

মােড়কিকরণের গুরুত্বঃ
(১) মােড়কিকরণের মাধ্যমে পণ্যের মান ও গুণগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
(২) পণ্যের মােড়কিকরণ করা থাকলে প্রতিকূল আবহাওয়া , চুরি, অবহেলাজনিত নষ্ট ইত্যাদি থেকে পণ্যকে রক্ষা করা যায় ।
(৩) পণ্যের আকর্ষণীয় নক্সা, রং, ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতা ও ভােক্তাকে আকর্ষণ করা যায়।
৪) পন্য মােড়কিকরণের মাধ্যমে সহজেই পণ্যটিকে সনাক্ত করা যায়।
(৫) মােড়কিকরণের মাধ্যমে পণ্যের ব্রান্ড ভ্যালু সুরক্ষিত থাকে।
(৬) মােড়কে পণ্যের সকল প্রয়ােজনীয় তথ্য দেওয়া থাকে; যেমন পণ্যের ওজন, উপকরণ, ব্যবহার বিধি, উৎপাদনকাল ইত্যাদি। এরফলে ক্রেতা ও ভােক্তা পণ্য সম্পর্কে সহজে জানতে পারে।
(৭) পণ্য মােড়কিরণের ফলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পণ্য ক স্থান থেকে আরেক স্থানে পণ্য পরিবহন করা সহজ হয়। (৮) একটি পণ্যকে অন্য পন্য থেকে সহজেই পৃথক করা যায়।

Check Also

প্রাণীর পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস উপস্থাপন। ৮ম শ্রেণি [৩য় সপ্তাহ] বিজ্ঞান

প্রিয় অষ্টম শ্রেণীর 2022 শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তোমাদের তৃতীয় সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল …