বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা। এইচএসসি 2021 সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র

এইচএসসি 2021 সালের সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র অ্যাসাইনমেন্টের পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। আমরা বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এইচএসসি 2021 সালের মানবিক বিভাগের ষষ্ঠ সপ্তাহের নির্ধারিত সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র অ্যাসাইনমেন্টের নির্দেশক এ উল্লেখিত পাঁচটি প্রশ্নের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর তৈরি করে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এইচএসসি 2021 সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র এসাইনমেন্ট এর উত্তর নিচের অংশে ভালভাবে পড়ুন।

এইচএসসি 2021 সমাজবিজ্ঞান ষষ্ঠ সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

প্রিয় এইচএসসি 2021 সালের পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চলনা আপনাদের ষষ্ঠ সপ্তাহের নির্ধারিত সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেখে নেয়া যাক। শুরুতে প্রশ্নের ছবি এবং নিচে এর উত্তর দেওয়া হল।

অ্যাসাইনমেন্টঃ

বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগােষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা।

উত্তরঃ

ক) নৃগােষ্ঠীর ধারণা ও প্রকৃতিঃ

প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন নৃগােষ্ঠীর বাস। এখানে প্রধান নৃগােষ্ঠী হচ্ছে বাঙালি-যাদের ভাষা বাংলা এবং অধিকাংশই সমতল ভূমিতে বসবাস করে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রায় ৫২ টির মতাে ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী রয়েছে। যাদের ভাষা, সাংস্কৃতিক, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান বাঙালি নৃগােষ্ঠী থেকে পৃথক। কেবল বাঙালি নৃগােষ্ঠী নয়,প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী অন্য ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী থেকেও আলাদা। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মধ্যে চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা, রাখাইন, সাঁওতাল, কুকি, তঞ্চল, কুমি, লুসাই, পাংখাে, খুমি, মণিপুরি, খাসিয়া, গারাে, প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

চাকমা:- বাংলাদেশের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এদের সংখ্যা বেশি। মারমা:- মারমাদের তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস দেখা গেলেও মূল জনগােষ্ঠী বসবাস হচ্ছে বান্দরবনে।

সাঁওতাল:- সাঁওতালরা বাংলাদেশের দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে বাস করে।

ত্রিপুরা:- বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, ঢাকাসহ এরা বসবাস করে।

গারাে:- গারাে বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বসবাসকারী আদিবাসী।

রাখাইন:- বর্তমানে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস মূলত কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায়।

মণিপুরী:- বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের লােক বাস করে।

মুরং:- বাংলাদেশে মুরং জনগােষ্ঠী বাস মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবন জেলা ও রাঙ্গামাটি জেলায়।

খ) বাংলাদেশে মগ/মারমা নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয়ঃ

মারমা বাংলাদেশের একটি আদিবাসী ও বৃহৎ জাতিসত্ত্বা। তিন পার্বত্য জেলায় তাদের বসবাস দেখা গেলেও মূল জনগােষ্ঠীর অধিকাংশের বসবাস বান্দরবানে। ‘মারমা’ শব্দটি ‘ম্রাইমা’ থেকে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারা মিয়ানমার থেকে এসেছে বিধায় তাদের ‘ম্রাইমা’ নাম থেকে নিজেদের মারমা নামে ভূষিত করে।[১] মারমারা মঙ্গোলীয় বংশােদ্ভূত। তারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কথা বলার ক্ষেত্রে মারমাদের নিজস্ব ভাষা মারমা বর্ণমালা ব্যবহার করে। মারমা সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। পুরুষদের মতাে মেয়েরাও পৈতৃক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী হয়। ভাত মারমাদের প্রধান খাদ্য। পাংখুং, জাইক, কাপ্যা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মারমা সমাজে জনপ্রিয়। তাদের প্রধান উৎসব ও পার্বণগুলাে হচ্ছে সাংগ্রাই পােয়ে, ওয়াছে পােয়ে, ওয়াগ্যোয়াই পােয়ে এবং পইংজ্বা পােয়ে। বান্দরবানে মারমা লােকসংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। শিক্ষাদীক্ষা ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মারমারা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশে চাকমার পর মারমা দ্বিতীয় বৃহত্তর আদিবাসী জনগােষ্ঠী (ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী)।

(গ) বাংলাদেশের মগ/মারমা নৃগােষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাঃ

বাংলাদেশের পাবর্ত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা গুলাের মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে মারমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। মারমা নৃগােষ্ঠীর অধিকাংশই রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বাস করে। মারমা’ শব্দটি ‘ম্রাইমা’ শব্দ থেকে উদ্ভুত।

সামাজিক জীবনঃ পার্বত্য অঞ্চলে বােমাং সার্কেলে মারমা সমাজের প্রধান হলেন বােমাং চীফ বা বােমাং রাজা। প্রত্যেক মৌজায় কতগুলাে গ্রাম রয়েছে। গ্রামবাসী গ্রামের প্রধান মনােনীত করে। মারমারা গ্রামকে তাদের ভাষায় রােয়া’ এবং গ্রামের প্রধানকে রােয়াজা’ বলে। মারমা পরিবারে পিতার স্থান সর্বোচ্চ হলেও পারিবারিক কাজকর্মে মাতা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। মারমা সমাজে পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েদের মতামত বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সাংস্কৃতিক জীবন: মারমারা নদীর তীরে সমতল স্থানে তাদের গ্রামগুলাে নির্মাণ করে। মারমাদের ঘরবাড়ি বাঁশ ও ছনের তৈরি। মারমা পুরুষেরা গমবং’ (পাগড়ি বিশেষ), গায়ে জামা ও লুঙ্গি পরে। তাদের মহিলারা গায়ে যে ব্লাউজ পরে তার নাম ‘আঞ্জি’, তাছাড়া তারা ‘থামি’ পরে। কাপড় বােনার কাজে মারমা জামা ও লুঙ্গি পরে। তাদের মহিলারা গায়ে যে ব্লাউজ পরে তার নাম আঞ্জি’, তাছাড়া তারা ‘থামি’ পরে। কাপড় বােনার কাজে মারমা নারীরা দক্ষ। তাদের মধ্যে হস্তচালিত ও কোমর উভয় ধরনের তাঁতের ব্যবহার রয়েছে। মারমারা পাবর্ত্য অঞ্চলের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মতাে ভাতের সাথে মাছ-মাংস ও নানা ধরনের শাকসবজি খায়।

(ঘ)বাংলাদেশের মণিপুরী নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয়:

মণিপুরী জাতি ভারত ও বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জনগােষ্ঠীর নাম। এদের আদি নিবাস ভারতের মণিপুর রাজ্যে। মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। ভারতের মণিপুর, আসাম, ও ত্রিপুরা রাজ্যের ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের লােক বাস করে। মণিপুরী (The Manipuris) বাংলাদেশের অন্যতম আদিবাসী সম্প্রদায়। প্রাচীনকালের সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং এখনকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর এদের আদি বাসস্থান।

প্রাচীনকালে মণিপুরী সম্প্রদায় ক্যাংলেইপাক (Kangleipak), ক্যাংলেইপাং (Kangkleipung), ক্যাংলেই (Kanglei), মেইত্ৰাবাক (Meitrabak), মেখালি (Mekhali) প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিল। মণিপুরীদের মেইতেই নামেও অভিহিত করা হতাে। মহারাজ গরীব নেওয়াজের (১৭০৯-১৭৪৮) শাসনামলে সিলেট থেকে আগত মিশনারিগণ এই স্থানকে মহাভারতে বর্ণিত একটি স্থান মনে করে এই ভূখন্ডের নাম দেন মণিপুর। এভাবেই এখানকার প্রধান অধিবাসী মেইতেইদের নাম হয়ে যায় মণিপুরী। পরবর্তীকালে অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এখনকার মণিপুর এবং মহাভারত-এ উল্লিখিত মণিপুর একই স্থান নয়। মণিপুরীরা বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ, সংগ্রাম এবং অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক কারনে বাংলাদেশে এসে বসতি স্হাপন করে।

ঙ)বাংলাদেশের মণিপুরি নৃগােষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাঃ

মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী। মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলাে মণিপুরী নৃত্য যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মণিপুরীদের মধ্যে ঋতুভিত্তিক আচার অনুষ্ঠান বেশি। বছরের শুরুতে হয় মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের বিষু এবং মৈতৈদের চৈরাউবা উৎসব। আষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ও কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মন্ডপগুলােতে বৈষ্ণব কবি জয়দেবের গীতগােবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয়। কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবন। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরন বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মন্ডপগুলােতে বৈষ্ণব কবি জয়দেবের গীতগােবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয়। কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবন। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরন বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রায় দেড়শত বছর ধরে (আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রি: থেকে) পালিত হয়ে আসছে। কার্তিকের পুর্ণিমা তিথিতে দুরদুরান্তের লক্ষ লক্ষ ভক্ত-দর্শক সিলেটের মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডবের এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষনে ছুটে আসেন।

আরও দেখুনঃ

এইচএসসি 2021 ইতিহাস [৬ষ্ঠ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর। HSC 2021 Assignment

2021 সালের এইচএসসি ভূগোল ২য় পত্র [৬ষ্ঠ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর। HSC 6th Week Geography

এইচএসসি 2021 ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি [৬ষ্ঠ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর। Assignment Ans HSC 2021

2021 সালের এইচএসসি সমাজকর্ম ২য় পত্র [৬ষ্ঠ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর। HSC Exam-2021 Assignment

Check Also

বই পড়ার অভ্যাস গঠনে লাইব্রেরির গুরুত্ব বিশ্লেষণ। ৯ম শ্রেণি [৩য় সপ্তাহ] বাংলা

৯ম শ্রেণির বাংলা এসাইনমেন্ট এর নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। প্রিয়  ৯ম শ্রেণীর …