সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে অপরের পরিপূরক। এইচএসসি 2022 সমাজবিজ্ঞান [৫ম সপ্তাহ] এসাইনমেন্ট উত্তর

এইচএসসি 2022 সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পঞ্চম সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞানের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। আমরা ইতোমধ্যে পঞ্চম সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন প্রকাশ করেছি। আজ উক্ত প্রশ্নের আলোকে নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করলাম। যেহেতু আমাদের ওয়েবসাইটের বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ শিক্ষকগণ প্রতিটি উত্তর তৈরি করে থাকে। তাই আপনি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এইচএসসি 2022 সালের মানবিক বিভাগের সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর সংগ্রহ করে এসাইনমেন্ট তৈরি করে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে পারেন। উত্তর পেতে নিচের অংশ ভালভাবে পড়ুন।

এইচএসসি 2022 সমাজবিজ্ঞান পঞ্চম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন

ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝার সুবিধার্থে অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর এর পূর্বে প্রশ্ন পুনরায় পর্যালোচনা করা হলো। যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন পড়ে বুঝে প্রশ্নের নং অনুযায়ী উত্তর ডাউনলোড করে নিতে পারে।

প্রশ্নঃ

সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে অপরের পরিপূরক।

নির্দেশনাঃ

  1. উদাহরণসহ সংস্কৃতির ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে
  2. উদাহরণসহ সভ্যতার ধারণ ব্যাখ্যা করতে হবে
  3. সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা করতে হবে।
  4. সভ্যতা ও সংস্কৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক উপস্থাপন করতে হবে।

এইচএসসি 2022 সালের সমাজবিজ্ঞান পঞ্চম সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর

প্রিয় এইচএসসি 2022 সালের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চলুন আপনাদের পঞ্চম সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দেখে নেয়া যাক।

উত্তরঃ

সংস্কৃতির ধারণাঃ

সংস্কৃতি (culture): সংস্কৃতি শব্দের আভিধানিক অর্থ কৃষ্টি বা উৎকর্ষ। অর্থাৎ অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানবুদ্ধি স্ত্রীতি-নীতি প্রভৃতির উৎকর্ষ কিংবা মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন। সমাজের সদস্য হিসেবে যে কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবন জীবিকার উপায়, ধর্মীয় রীতিনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, রাজনীতি, শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প, প্রযুক্তি, সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য, নাট্যশালা প্রভৃতির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি বা উৎকর্ষের প্রকাশ পায়, তাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি যেমন নিত্য দিনের জীবন যাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত তেমনি জীবন উপভােগের ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত। সংস্কৃতি হল সমাজে টিকে থাকার কৌশলের অনুশীলনের মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন। পৃথিবীতে একমাত্র সংস্কৃতিবান প্রাণী হল মানুষ। মানুষের টিকে থাকার কৌশলগুলাের অনুশীলন ভৌগােলিক, সামাজিক, জৈবিক প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত কৌশলগুলাে উত্তরপুরুষগণ অনুশীলন করে অধিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করে। তাই সময়ের পালাক্রমে মানুষ আরাে উন্নত কিছু কৌশল সৃষ্টি করে সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে থাকে।

নৃ-বিজ্ঞানী টেইলরের মতে, culture is “that complex whole which includes knowledge, belief, art, morals, law, custom and any other capabilities acquired by man as a member of society.” হল সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি, আদর্শ, আইন, প্রথা এবং অন্য যে কোন যােগ্যতা প্রভৃতির এক যৌগিক সমন্বয়।উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আগত জনগােষ্ঠীর (আর্য, দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, মঙ্গোলীয়, আফগান, পাঠান, মারাঠী, পার্সিয়ান, মুঘল, সালতানাৎ, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, ইংরেজ ইত্যাদি) কারণে এ অঞ্চলের বাঙালিরা যেমন সংকর জাতিতে পরিণত হয়েছে তেমনি এদের আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা, মূল্যবােধ, প্রথা, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, শিল্পকলা, ভাষা, সাহিত্য, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।

সভ্যতার ধারণাঃ

সভ্যতাঃ(civilization): সংস্কৃতির বাহ্যিক প্রকাশই হল সভ্যতা। সভ্যতা সংস্কৃতিরই অংশ। সভ্যতা হল সংস্কৃতির বস্তুগত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন- মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবন জীবিকার উপায়, ধর্মীয় রীতি-নীতি, সামাজিক সম্পর্ক, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, নাট্যশালা প্রভৃতির মাধ্যমে সভ্যতা পর্যায়ক্রমে বিকশিত হয়। সংস্কৃতি বিকাশের প্রথম পর্যায় থেকে সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। নগর বিকাশের মাধ্যমে সংস্কৃতি বিকাশের সবচেয়ে উন্নত সমন্বয় দেখা যায়। তাই নগর বিকাশকে সভ্যতার সূচনা বলেও ধরা হয়। বাংলা ‘সভ্যতা’। শব্দের ইংরেজি ‘civilization’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ civilis’ থেকে এসেছে। যার বাংলা অর্থ নগরে বসবাসরত ব্যক্তি। যখন কোন একটি স্থানের মানুষ সভ্য হয়, তখন তারা কোন ছােট গােত্র কিংবা যৌথ পরিবারের মত বসবাস করে না। বরং নগরের মত একটি বড় পরিসরে সংগঠিত হয়ে একত্রে বসবাস করে। মানুষের সংগঠিত বসবাসের ক্রমােন্নত স্তর হল সভ্যতা। এ স্তরে নিজস্ব জীবনব্যবস্থা, আত্মরক্ষার পদ্ধতি, কৃষিব্যবস্থা, সাধারণ ভাষা, ধর্ম, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারপদ্ধতি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক বিষয়গুলাে বিদ্যমান থাকে।

ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের মতে, ‘আমরা যা করি, তাই আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের যা আছে, তাই আমাদের সভ্যতা। অর্থাৎ, সংস্কৃতি হল মানুষের সামাজিক জীবন প্রণালি এবং সভ্যতা হল সে জীবন প্রণালির বাহ্যিক রূপ। সকল সমাজেরই নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। তবে খুব কম সমাজ রয়েছে, যাদের নিজস্ব সভ্যতা আছে। সভ্যতা বিকাশের পূর্ব শর্ত হল সংস্কৃতি। আর সভ্যতা সংস্কৃতি বিকাশের ধাপগুলাে উপস্থাপন করে। সংস্কৃতির জন্ম ও টিকে থাকার মাধ্যমে একটি সভ্যতা পূর্ণতা লাভ করে এবং বিকশিত হয়। অবশেষে পরিপূর্ণ এবং বিকশিত একটি সভ্যতার মাঝে কেবল মানুষ, সংস্কৃতি ও অবকাঠামাে বা নানা নিদর্শনকে বাহ্যিক রূপে দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণঃ

১. মিশরীয় সভ্যতা

২. সিন্ধু সভ্যতা

৩. রােম সভ্যতা

৪. পারস্য সভ্যতা ইত্যাদি

সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিভিন্ন ধরনঃ

সংস্কৃতি ও সভ্যতা প্রকৃতি দ্বারা মানুষের সামাজিক প্রাণী হয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা হচ্ছে সমাজের প্রকৃতি নির্ধারণে দুটি বিষয়। নিম্নে সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিভিন্ন ধরন ব্যাখ্যা করা হলাে

১। সংস্কৃতি হলাে মানুষ যা কিছু করে। অন্যদিকে সভ্যতা হলাে মানুষ যা ব্যবহার করে।

২। সংস্কৃতি মানুষের ভেতরের রূপ। অন্যদিকে সভ্যতা হলাে মানুষের বাহ্যিক আচরণ।

৩। সংস্কৃতি পরিমাপের মানদন্ড নাই। অন্যদিকে সভ্যতা পরিমাপের মানদন্ড রয়েছে।

৪। সংস্কৃতি ধীর গতিতে এগিয়ে চলে। অন্যদিকে সভ্যতা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে।

৫। সংস্কৃতির চাহিদা এবং আবেদন তুলনামুলকভাবে কম। অন্যদিকে সভ্যতার চাহিদা এবং আবেদন বেশি।

৬। সংস্কৃতি ধ্বংস হয় না। অন্যদিকে সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

৭। সংস্কৃতি মানুষের জীবন প্রণালী। অন্যদিকে সংস্কৃতির প্রতিফলনই হলাে সভ্যতা।

৮। সংস্কৃতির মাপকাঠিতে অগ্রসর বিবেচিত হতে হলে দেখতে হবে মানুষের মনের উৎকর্ষ। অন্যদিকে সভ্যতার মাপকাঠিতে মানুষ অগ্রসর বিবেচিত হতে পারে।

৯। জীবনযাপনের সকল পদ্ধতি বা কলাকৌশলই সংস্কৃতি। অন্যদিকে উন্নত কলা-কৌশল বা প্রযুক্তি কেবল সভ্যতা।

১০। সংস্কৃতি মানুষের নৈতিক, পারমাঙ্গিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয় বােঝায়। অন্যদিকে সভ্যতা প্রযুক্তিবিদ্যা, বস্তুগত সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সমষ্টিকে বোঝায়।

১১। সংস্কৃতির গুণমান ও উপযােগিতা যাচাই করা যায় না। অন্যদিকে সভ্যতার গুণমান ও উপযােগিতা যাচাই করা যায়।

সংস্কৃতি ও সভ্যতার পারস্পরিক সম্পর্কঃ

সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে সম্পর্কিত। একজনকবিকে যেমন তার কবিতা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না, তেমনি সংস্কৃতিকে সভ্যতা থেকে পৃথক করা যায় না। এরই প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্পর্ক নিম্নে উল্লেখ করা হলাে।

১. সংস্কৃতি ও সভ্যতা শুধু আন্তনির্ভরশীল নয়, আন্তক্রিয়াশীলও বটে। যেমন-সংস্কৃতির দুটি অংশ বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি, আবার বস্তুগত সংস্কৃতির চরম বিকাশই সভ্যতা। এই অর্থে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে মূলগত কোনাে পার্থক্য নেই; বরং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

২. সংস্কৃতির উপাদান যেমন সভ্যতার উপাদান দ্বারা প্রভাবিত, তেমনি সভ্যতার উপাদানও সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণের দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত। যেমন-আরবরা যে পােশাক পরে তা আরব দেশের সংস্কৃতির অংশ।

৩. সংস্কৃতিকে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি বলা হয়। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, সভ্যতা যদি হয় দেহ, তবে আস্থল-সংস্কৃতি।

৪. অনেক সমাজবিজ্ঞানী বস্তুর ব্যবহারিক দিক ও কলাকৌশলকে সংস্কৃতি বলেছেন। এমনকি বস্তুকেও তাঁরা সংস্কৃতি থেকে বাদ দেননি। আর তাঁদের মতে, মানুষের বিমূর্ত চিন্তার ফসল সভ্যতা। জার্মান দার্শনিক কান্টের মতানুসারে সংস্কৃতি হলাে মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পক্ষান্তরে সভ্যতা মানুষের বাহ্যিকজার্মান দার্শনিক কান্টের মতানুসারে সংস্কৃতি হলাে মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পক্ষান্তরে সভ্যতানুষর ধহ্যিক আচরণেরসঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সভ্যতা উপযুক্ত উপাদান ও পরিবেশ সৃষ্টি করে। কাজেই সভ্যতা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত। সম্পর্কের দিক থেকে সংস্কৃতি ও সভ্যতা একটি অপরটির পরিপূরক।

আরও দেখুনঃ

এইচএস সি ৪র্থ সপ্তাহ বাংলা এসাইনমেন্ট উত্তর 2021। বাংলা [১ম-পত্র] অ্যাসাইনমেন্ট পিডিএফ ডাউনলোড

এইচএসসি ৪র্থ-সপ্তাহ অর্থনীতি এসাইনমেন্ট উত্তর 2021। [১ম-পত্র] উত্তর ডাউনলোড

সকল পোস্টের আপডেট পেতে ‍নিচের ফেসবুক আইকনে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক পেইজে জয়েন করুন।

Check Also

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিচয়। ৭ম শ্রেণি বাংলা [৩য় সপ্তাহ] এসাইনমেন্ট উত্তর

সপ্তম শ্রেণির বাংলা এসাইনমেন্ট এর নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। প্রিয় সপ্তাহ শ্রেণীর …