বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমেই জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব এর যৌক্তিকতা নিরূপণ।

এইচএসসি 2022 সালের পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অষ্টম সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত সমাজকর্ম অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। যার প্রশ্নে ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আজ এর উত্তর প্রকাশ করা হলো। নিচের প্রশ্নের ছবি এবং পরবর্তীতে তার উত্তর দেওয়া হল।

এইচএসসি 2022 সমাজকর্ম ৮ম সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর

অ্যাসাইনমেন্টঃ

বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমেই জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব এর যৌক্তিকতা নিরূপণ।

উত্তরঃ

ক. মৌলিক মানবিক চাহিদার ধারণা:

মানুষের চাহিদার কোনাে শেষ নেই। মানুষ দৈনন্দিন অনেক কিছুরই চাহিদা অনুভব করে। কিন্তু সকল প্রকার চাহিদা মৌলিক মানবিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রধানত দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং সামাজিক জীবনের উৎকর্ষ সাধনের জন্য যে সকল চাহিদা পূরণ করা অপরিহার্য, সেগুলােই, মৌলিক মানবিক চাহিদার পর্যায়ভুক্ত। মৌলিক মানবিক চাহিদা মূলত দু’ধরনের চাহিদার সমন্বয়। যেমন-

(ক) মৌলিক চাহিদা (Basic Needs), (খ) মানবিক চাহিদা (Human Needs)

(ক) মৌলিক চাহিদা: মানুষসহ যেকোনাে জীবন্ত প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ করা অপরিহার্য তাকে মৌলিক চাহিদা বলে। একে জৈবিক বা দৈহিক চাহিদাও বলা হয়। এ চাহিদার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মানুষসহ সকল জীবন্ত প্রাণীর বেঁচে থাকা এবং দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এটি পূরণ করা অত্যাবশ্যক। মৌলিক চাহিদার আওতায় আসে খাদ্য (food), ঘুম (sleep) ইত্যাদি।

(খ) মানবিক চাহিদা: সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য যে সকল চাহিদা পূরণ একান্ত অপরিহার্য, সেগুলােকে মানবিক চাহিদা বলে। মানবিক চাহিদা অনেক সময় সামাজিক চাহিদা হিসবে আখ্যায়িত হয়। এটা শুধু মানুষের ক্ষেত্রে বিশেষ করে সমাজবদ্ধ সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য। মানবিক চাহিদা পূরণ করা সামাজিক জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ চাহিদাগুলৌগনুষকে সমাজের অন্য প্রাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করে ‘আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদা দিয়েছে। মানবিক চাহিদা হলাে- বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি।মানুষের বেঁচে থাকা, জীবনের বিকাশ এভমাজিক জীবনযাপনের জন্য যে সকল উপকরণ একান্তই অপরিহার্য, যার কোনাে বিকল্প নেই, তাদের সমষ্টিকে মৌলিক মানবিক চাহিদা বলে। ডেভিড জেরি এবং জুলিয়া জেরি (২০১৫) প্রণীত “কলিন্স সমাজবিজ্ঞান অভিধান” -এর সংজ্ঞানুযায়ী, “মৌলিক মানবিক চাহিদা এমন একটি ধারণা, যাতে সকল মানুষ তাদের মানবিক গুণাবলির স্কারণে মৌলিক চাহিদা হিসেবে এগুলাে পূরণে অংশগ্রহণ করে।

সমাজজীবনে পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হিসেবে মৌলিক চাহিদাগুলাে পূরণ বিবেচিত (Basic human needs is the conception that all human being share fundamental needs by virtue of their humanity. The fulfillment of these basic needs is seen as an essential precondition for full participation in social life.)।” চাহিদার ধারণায় রবার্ট এল বাকার (১৯৯৫) “সমাজকর্ম অভিধান” -এ বলেন, “চাহিদা হলাে সেসব দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রয়ােজন, যেগুলাে মানুষের বেঁচে থাকা, কল্যাণ এবং বিকাশ ও পরিতৃপ্তির জন্য অপরিহার্য (Needs, physical, psychological, economical, cultural and social requirements for survival, well-being and fulfillment.) ”

মৌলিক মানবিক চাহিদার ধারণায় আবদুল হালিম মিয়া (২০০৬) বলেন, “মানুষ হিসেবে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের জন্য যে সকল গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা অপরিহার্য সেসব চাহিদাকেই মৌলিক চাহিদা বলে (Basic human needs may be defined as those important needs which are inevitable for healthy and normal social life as human being.) i” পরিশেষে বলা যায়, মানুষের জীবনধারণ, শারীরিক প্রবৃদ্ধি, মানকি বিকাশ ও পরিতৃপ্তি এবং সভ্য ও সামাজিক জীবনযাপন ও তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য যে চাহিদাগুলাে পূরণ অবশ্যক সেগুলাের সমষ্টিকে মৌলিক মানবিক চাহিদা বলা হয়।

খ. মৌলিক মানবিক চাহিদার বিবরণ:

মার্কিন সমাজকর্ম গবেষক Charlotte Towle (১৯৬৫) তার “Common Human Needs” গ্রন্থে ছয়টি চাহিদাকে মৌলিক মানবিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চাহিদাগুলাে হচ্ছেক
১। খাদ্য (Food): মৌলিক মানবিক চাহিদার মধ্যে প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলাে খাদ্য। যে জৈব উপাদান গ্রহণের মধ্যেমে জীবদেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, পেশি পরিচালনা, রােগ প্রতিরােধ করে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখে তাকে খাদ্য বলে। মৌলিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে, মানুষ স্বাভাবিক উপায়ে খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে অস্বাভাবিক উপায়ে তা পূরণের চেষ্টা করে। খাদ্যের উপাদান ছয়টি। যথা: আমিষ, শর্করা, মেহ, ভিটামিন, লবণ ও পানি।
২। বস্ত্র (Clothing): বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক্স চাহিদা। মানবসভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে বস্ত্রের প্রয়ােজন শুধু অপরিহার্য নয় বরং মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্র বিকাশেও বস্ত্রের গুরুত্ব সমধিক। মানবসভ্যতার প্রধান নির্দেশক ও নিদর্শন হলাে বস্ত্র। দৈহিক, নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সকল দিক থেকেই বস্ত্রের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। মূলত বস্ত্র পরিধানের ব্যবস্থা তথা মানব সংস্কৃতির বিকাশ ও উৎকর্ষতাই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে।
৩। বাসস্থান (Housing): মানুষের বসবাসের স্থান বা ঘর-বাড়িকে বাসস্থান বলে। মানুষের আদি ও সহজাত মৌলিক প্রয়ােজন হলাে বাসস্থান বা নিরাপদ আশ্রয়। সমাজ ও সভ্যতাকে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাসস্থানের অবদান অনেক বেশি। শান্তিতে ঘুমানাের জন্য, ঝড়-বৃষ্টি-শীত-তাপ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে, বন্য জীব-জন্তু ও চোরডাকাতের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য, সুস্থ পরিবার গঠন ও পরিচালনায় নিরাপদ ও মানসম্মত বাসস্থানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪। শিক্ষা (Education): শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাই মানব সংস্কৃতির বিকাশ এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। Oxford Advanced Learner’s Dictionary of Current English-এর সংজ্ঞানুসারে, “জ্ঞানের প্রসার এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের মাধ্যমে পাঠদান, প্রশিক্ষণ এবং কোনাে বিষয় জানার প্রক্রিয়া হলাে শিক্ষা।” বিখ্যাত সাহিত্যিক John Milton-এর ভাষায়,“Education is the harmonious development of body, mindy and soul” অর্থাৎ দেহ ও মনের যথাযথ বিকাশ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষার মাধ্যমে মানবীয় জ্ঞান ও দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় এভাবে সমাজ টিকে থাকে। শিক্ষা সভ্যতার প্রধান উপকরণ, মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির হাতিয়ার। মনুষ্যত্ব ও মানুষের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তােলার জন্য শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য।
৫। স্বাস্থ্য (Health): স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মানবিক চাহিদা। স্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য সম্পদ। WHO (১৯৪৮) এর মতে, “স্বাস্থ্য বলতে শুধু রােগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি বােঝায় না বরং দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক সার্বিক সুস্থ্য অবস্থাকে বােঝানাে হয়ে থাকে। কর্মক্ষমতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রতিভা ও সৃজনশীলতা প্রভৃতি বিকাশে স্বাস্থ্য অপরিহার্য।” বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মােহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছেন, অর্থাৎ “Health is physical, mental and spiritual well being of a person.” ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, আত্মিক মঙ্গলজনক অবস্থাই হচ্ছে স্বাস্থ্য।
৬। চিত্তবিনােদন (Recreation): নির্মল আনন্দ ও আমােদ-প্রমোেদ লাভের কার্যক্রম হলাে বিনােদন। হ্যারল্ড বি. মেয়ার এবং চার্লস কে. ব্রাইট বিল এর মতে, “চিত্তবিনােদন বলতে এমন এক কার্যক্রম বােঝায় যা আনন্দ লাভ ও তৃপ্তিদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সৃজনশীল অনুভূতি প্রকাশের সুযােগ করে দেয়।” সুস্থতা, সজীবতা ও কর্মক্ষমতা জাগ্রতকরণ, ক্লান্তি ও হতাশা দূরীকরণ, সামাজিকীকরণ, শিক্ষা ও সৃজনশীলতা এবং গঠনমূলক চিন্তার জন্য বিনােদন অপরিহার্য। অবসর সময়কে অর্থবহ করে তােলার অন্যতম মাধ্যম চিত্তবিনােদন।

গ. নিম্নবিত্তদের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের বিদ্যমান ৫টি সমস্যা চিহ্নিতকরণ:

যে কোনাে দেশের সামাজিক সমস্যা উদ্ভবের অন্যতম কারণ হলাে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা। মৌলিক মানবিক চাহিদার যথাযথ পরিপূরণ না হলে যেমন স্যার সৃষ্টি হয়, তেমনি স্বাভাবিক উপায়ে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে অস্বাভাবিক বা অবৈধ উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এগুলাে পূরণের প্রচেষ্টা থেকেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এজন্য সমাজবিজ্ঞানীরা মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতাকে সামাজিক সমস্যার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। মৌলিক মানবিক চাহিদা অপূরণজনিত কারণে”ধাংলাদেশে সৃষ্ট সমস্যাবলি সম্পর্কে নিচে আলােচনা করা হলাে:
১. পুষ্ঠিহীনতা (Malnutrition): মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য সমস্যা হলাে পুষ্টিহীনতা। সাধারণত খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাব, পরিমাণগত স্বল্পতা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অবস্থাই হচ্ছে পুষ্টিহীনতা। খাবারের ছয়টি উপাদানের যে কোনাে একটি খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে বা অনুপস্থিত থাকলে পুষ্টি-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে দেহে সে উপাদানের ঘাটতিজনিত রােগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এরূপ অবস্থাকে পুষ্টিহীনতা বলে। পুষ্টিহীনতা বলতে কেবল দুর্বল স্বাস্থ্যকেই বােঝায় না। এটি একটি দৈহিক আপেক্ষিক অবস্থা। পুষ্টিহীনতা বলতে নিম্নিলিখত অবস্থাকে বােঝায়: ক. কাজ করার সামথ্যে ব্যাঘাত ঘটা; খ. দৈহিক গাঠনিক সম্পূর্ণতার অভাব এবং গ. দেহে প্রয়ােজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাঝে গরমিল।
২. স্বাস্থ্যহীনতা (Ill-health): শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ঘাটতি বা অভাবজনিত অবস্থাকে স্বাস্থ্যহীনতা বলে। বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট অন্যতমস্যা হলাে স্বাস্থ্যহীনতা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিত্তবিনােদন ইত্যাদি মৌলিক মানবিক চাহিদা এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়ােজন। খাদ্যের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে এ দেশের অনেক মানুষ নানা রােগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে স্বাস্থ্যহীনতার শিকার হয়। প্রয়ােজনীয় ও স্বাস্থ্যসম্মত বস্ত্রের সংকটের কারণে বহু লােকের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। শিক্ষার অভাবও স্বাস্থ্যহীনতার জন্য বহুলাংশে দায়ী। শিক্ষার অভাবে মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অজ্ঞ হয়। রােগব্যাধির কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরােধের ব্যাপারে তারা অজ্ঞ থাকে। ফলে তারা স্বাস্থ্যহীনতায় ভােগে। পর্যাপ্ত আলাে-বাতাস, খােলামেলা ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান সংকটের কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। নির্মল ও গঠনমূলক চিত্তবিনােদনের অভাবে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, হতাশা, চাপ প্রভৃতি দূর করা সম্ভব হয় না। এজন্য তারা সহজেই বিভিন্ন রােগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যহীনতায় ভােগে। সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলাে প্রত্যাশিত মান অনুযায়ী পূরণ না হওয়ায় স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. গৃহ ও বস্তি সমস্যা (Housing and Slum Problem): গৃহ হচ্ছে মানুষের আশ্রয়স্থল। জনসংখ্যার তুলনায় গৃহের সংখ্যা কম। ফলে শহর এলাকায় অনেকেই বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বগুলিতে মন এক অবহেলিত জনবসতি এলাকাকে বােঝায়, যেখানে জীবনধারণের ন্যূনতম সুযােগটুকুও থাকে না। অত্যন্ত নিম্ন জীবনমান, পয়ঃনিষ্কাশনের অভাব, পানীয় জল ও আeaf.ধসের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপরাধ প্রভৃতি বস্তি এলাকার নিত্য সঙ্গী যা সমাজকে করে কলুষিত। এ কারণেই বস্তিকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ১০ লাখ লােক গৃহহীন। এরা শহর, নগর, বন্দর এবং গ্রাম এলাকায় অস্থায়ী বাসস্থান স্থাপন করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিল্প ও শহরাঞ্চলের পাশে নিম্ন আয়ের লােকেরা গড়ে তােলে ছােট খুপরি ঘর যা বস্তি নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের শহরগুলােতে বস্তিসমস্যা অত্যন্ত প্রকট। শুধু ঢাকা শহরে ৩৫ শতাংশ লােক বস্তিতে বাস করে। ২০১১ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এদেশে বস্তির সংখ্যা ছয় হাজার এবং বস্তির লােকসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। বস্তির নােংরা ঘিঞ্জি পুব্রিক্য স্বাস্থ্যহীনতা, সামাজিক সমস্যা ও অনাচারের সূতিকাগার। গৃহের স্বল্পতা ও বস্তির বিস্তারের ফলে স্বাস্থ্যহীনতা, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা, অপরাধ, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, পতিতাবৃত্তিসহ নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। গৃহ ও বস্তি সমস্যা দেশের অন্ন-বস্ত্রের সমস্যার সাথে জড়িত। বাংলাদেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা মােকাবিলা করার পর বাসস্থানের চাহিদা পূরণের সংগতি অনেকের থাকে না। গৃহ ও বস্তি সমস্যার অপর দিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অভাব। এজন্য জনগণের শিক্ষার অভাব অনেকাংশে দায়ী। নিরক্ষর ও অজ্ঞ জনগণ ঝােপঝাড়ে ঘেরা, আলাে-বাতাসহীন ঘর যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা জানে না বলে ঘরকে ঝুপড়িতে পরিণত করে রাখে।
৪. নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা (Illiteracy and Ignorance): নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা, মৌলিক মানবিক চাহিদা অপূরণজনিত একটি মারাত্মক সমস্যা। নিরক্ষরতা বলতে অক্ষরজ্ঞানহীন অবস্থা এবং অজ্ঞতা বলতে জ্ঞানের অভাবকে বােঝায়। দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুদ্র ও সাধারণ বক্তব্যকে উপলদ্ধি সহকারে লিখতে এবং পড়তে অক্ষম ব্যক্তির অবস্থাকে নিরক্ষরতা বলে। বাংলাদেশের শতকরা ৩৮ জন লােক নিরক্ষর। নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার মূলে অন্যান্য উপাদান থাকলেও অপূরিত মৌলিক মানবিক চাহিদার প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। কারণ, শিক্ষার অভাব থেকেই সমাজে নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা দেখা দেয়। একমাত্র শিক্ষাই মানুষকে নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বলে তারা শিক্ষার প্রতি নজর দিতে পারে না। ফলে তারা নিরক্ষর ও অজ্ঞ থাকে। স্বল্প আয়ের লােকেরা বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, চিত্তবিনােদন প্রভৃতি পূরণ করতে পারছে না বলে স্বভাবতই শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে না। ফলে তারা নিরক্ষর ও অজ্ঞ থেকে যায়।
৫. অপরাধপ্রবণতা (Criminality): সমাজের প্রচলিত আইনকানুন, রীতিনীতি, মূল্যবােধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী কার্যকলাপকে অপরাধ বলে। অপূরিত মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি অপরিহার্য পরিণতি হচ্ছে, অপরাধপ্রবণতা। সমাজে বৈধ উপায়ে মানুষ যখন মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি অপরিহার্য পরিণতি হচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। সমাজে বৈধ উপায়ে মানুষ যখন মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তখন অবৈধ বা অসামাজিক উপায়ে এগুলাে পূরণের চেষ্টা করে। ফলে মানুষের মাঝে স্বভাবতই অপরাধপ্রবণতা দেখা দেয়। অপরাধপ্রবণতার পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। তবে অপূরিত মৌলিক মানবিক চাহিদা সমাজে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টির একটি শক্তিশালী কারণ।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ অপরাধই খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য সংঘটিত হয়। বৈধ উপায়ে খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে ক্ষুধার্ত মানুষ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ ইত্যাদি অপরাধের মাধ্যমে খাদ্য জোগাড়ের চেষ্টা করে। আবার শিক্ষার চাহিদা অপূরিত থাকলে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দেখা দিতে পারে। অপরাধীদের মধ্যে নিরক্ষরের সংখ্যাই বেশি। নিরক্ষর মানুষ ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, দায়িত্বজ্ঞানের অভাব এবং কুসংস্কারের বশে নানারকম সমাজবিরােধী কাজ করে। এতে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বাসস্থানের অভাব এবং বস্তি সমস্যা বিভিন্নভাবে ব্যক্তিকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। চিত্তবিনোদনের অভাবে জীবন একঘেয়ে ও বিস্বাদ হয়ে ওঠে, সৃষ্টি হয় নিরাশা, হতাশা আর বঞ্চনার যা মানুষকে অনেক সময় অপরাধের দিকে ধাবিত করে।

ঘ. সমস্যা সমাধানে ৫টি পদক্ষেপ:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ১৫ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলাে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের দিন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন; যাতে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং যুক্তিসংগত বিনােদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত হয়। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সকল নাগরিকের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে কতগুলাে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবসম্মত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
১. খাদ্য (Food): বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সার্বিক কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০), জাতীয় কৃষিনীতি ও সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষিখাতের উন্নয়নের সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হয়েছেaমষ্টি, ঘাগুণ বজায় রাখা ও অধিক ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুষম সার ও জৈব সারের ব্যবহার কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে দেশের বিপুল জনগােষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নকে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রসেচ সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, নিবিড় চাষ, উন্নতমানের ও উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ, জমির ব্যবহার বহুধাকরণ, পতিত জমি পুনরুদ্ধার, লবণাক্ত সহিষ্ণু ও স্বল্প সময়ের শস্যের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
২. বস্ত্র (Clothing): বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৩ সালেরুষধ্যে রস্কে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেশের প্রথম বস্ত্ৰনীতি ঘােষণা করে। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের মধ্যে বার্ষিক মাথাপিছু ১৭ মিটার বস্ত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পােশাক শিল্পের শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ বস্ত্রের চাহিদা দেশীয় শিল্প থেকে আসে। বস্ত্র ও তৈরি পােশাক শিল্পে বর্তমানে ৫০ লক্ষাধিক জনবল নিয়ােজিত রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ মিলগুলাে পর্যায়ক্রমে চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বস্ত্রখাতের উন্নয়নে বস্ত্র প্রযুক্তিবিদ ও বস্ত্রবিষয়ক দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণে বস্ত্র দপ্তর ৫টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৬টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ৪০টি ভােকেশনাল ইনস্টিটিউট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ রেশম বাের্ড, বাংলাদেশ তাঁত বাের্ড, বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন, পাট অধিদফতর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বস্ত্রখাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমাজের দুস্থ ও দরিদ্র শ্রেণির বস্ত্রের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার পুরাতন কাপড় আমদানিসহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
৩. বাসস্থান (Housing): দরিদ্র জনগােষ্ঠীর গৃহায়ণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ১৯৯৭-৯৮ সালে গৃহায়ণ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল দ্বারা এ পর্যন্ত ৩.৫৫ লক্ষ জন উপকৃত হয়েছে গৃহনির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত ৬১,০৯২টি গৃহনির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে মােট ৫১৩টি এনজিও ৬৪টি জেলার ৪৫০টি উপজেলায় গৃহায়ন ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শহরাঞ্চলের ভাসমান জনগােষ্ঠীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কয়েকটি পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গ্রহণ করা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৯৯৭-২০০২ পর্যন্ত সময়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় পুখকরা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় জুলাই ২০০২-ডিসেম্বর ২০১০ মেয়াদে আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেজ-২) গ্রহণ করা হয় এবং ডিসেম্বর ২০১০ প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৮,৭০৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৫০ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীনও ছিন্নমূল দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জুলাই, ২০১০ থেকে জুন, ২০১৭ মেয়াদে ১,১৬৯.১৭ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপনকারী ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের নিজ এলাকায় স্বস্তিকর পরিবেশে বাসগৃহে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ঘরে ফেরা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর আওতায় ৬৫৬টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ঘরে ফেরা কর্মসূচির আওতায় ৩০০টি বস্তিবাসী পরিবারের মধ্যে ১.৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ‘সকলের জন্য আবাসুকর্মসূচির আওতায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লােকদের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪১,৫৮১টি প্লট উন্নয়ন ও ৩১,৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ৪৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গুচ্ছগ্রাম পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ৪৯টি জেলার ১০২টি উপজেলায় ১৬৩টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমিহীন ৭,১৭২টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে।
৪. শিক্ষা (Education): সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার প্রতিপালনে সকলের শিক্ষb জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার একটি নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার যুগােপযােগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করেছে। শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনহ নানাবিধ উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৮,৫৩৭টি। প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ও হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি এবং বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১,৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের ২৬,১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামােগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে ৫৫৫টি সরকারি এবং ৭৭টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার করা হয়েছে। সরকার বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে।
৫. স্বাস্থ্য (Health); সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা হলাে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্য পরিচর্যা (Primary Health Care)-র উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় শিশুদের মারাত্মক ছয়টি রােগ:ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, পােলিও, হুপিং কফ, যক্ষ্মা ও হাম প্রতিরােধের জন্য ১৯৭৯ সাল থেকে টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। দেশকে পােলিওমুক্ত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী জাতীয় টিকাদান দিবস পালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, যক্ষ্মাও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ এবং ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত অন্ধত্ব দূরীকরণ, কৃমিনাশক ঔষুধ বিতরণ ও টিকাদান ইত্যাদি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, পরিবারকল্যাণ, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১১-১৬ মেয়াদে ৫৬,৯৩৩.৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য এ পর্যন্ত ৩,৮৮১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, ১২৮১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৪২১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামীণ জনগােষ্ঠীর দোরগােড়ায় পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহকে সচল রেখে স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া তিন স্তরবিশিষ্ট উপজেলাস্থ্যবস্থ, গড়ে তােলার লক্ষ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

Check Also

চিহ্নিত চিত্রসহ জীবকোষের গঠন। ৬ষ্ঠ শ্রেণি [৩য় সপ্তাহ] বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট উত্তর 2022।

৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট এর নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। প্রিয়  ৬ষ্ঠ শ্রেণীর …