ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত এসএসসি 2021 সালের পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ৭ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বোচ্চ নম্বর এর কথা বিবেচনা করে আমরা প্রকাশিত অ্যাসাইনমেন্ট এর নির্দেশক এর পাঁচটি প্রশ্নের আলাদা আলাদা হেডিং এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করেছি। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং সপ্তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন দেখে প্রশ্নের নং অনুযায়ী অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর ডাউনলোড করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো। নিচে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দেওয়া হল।

এসএসসি 2021 ৭ম সপ্তাহ ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

প্রিয় এসএসসি 2021 সালের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চলনা আপনাদের সপ্তম সপ্তাহের নির্ধারিত ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইনমেন্ট এর পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেখে নেয়া যাক। শুরুতে প্রশ্ন ছবি এবং ছবির নিচের অংশে উত্তর দেওয়া হল।

অ্যাসাইনমেন্টঃ

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ।

উত্তরঃ

ক নংপ্রশ্ন: মুলধন বাজেটিং এর ধারণা ব্যাখ্যাঃ

উত্তর: সাধারনভাবে বলা যায়, দীর্ঘসময় ধরে নগদ আন্ত:প্রবাহ পাওয়ার আশায় কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি যে বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে মূলধন বাজেটিং বলে। মূলধন বাজেটিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় থেকে শুরু করে এসব সম্পত্তির প্রতিস্থাপন, ব্যবসার সম্প্রসারণ

যেমন: নতুন মেশিন স্থাপন, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে সম্ভাব্য লাভজনকতা বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ তিন ভাই মাসুদ, রাসেল ও তানভীর আলাদা আলাদা ব্যবসায় করে। কিছু দিন ধরে মাসুদ তার কনফেকশনারির জন্য একটি ফ্রিজ কেনার চিন্তা ভাবনা করছে। ছয় মাস পূর্বে রাসেল একটি ফটেকিপি মেশিন দিয়ে তার ব্যবসায় শুরু করে। অতিরিক্ত চাহিদার কথা চিন্তা করে বর্তমানে তিনি আরাে একটি ফটোকপি মেশিন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে তানভীর একটি আধুনিক সেলুন ব্যবসায় শুরু করার জন্য প্রয়ােজনীয় আসবাবপত্র (হুইল চেয়ার ও আয়না) ও চুল কাটার কাঁচি ও পারফিউম ক্রয় করার চিন্তা ভাবনা করছেন। এখানে কনফেকশনারির ফ্রিজ, ফটোকপি মেশিন এবং সেলুনের হুইল চেয়ার এবং চুল কাটার কাঁচি কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত।

এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে বা নাকি আদৌ লাভজনক হবে না, সে জন্য অর্থায়নের একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া একান্ত প্রয়ােজন। মূলধন বাজেটিং এরূপ একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি লাভজনক বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্তের বা প্রকল্পের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়। আয়-ব্যয়। প্রাক্কলন শেষে এসব সিদ্ধান্তের বা প্রকল্পের নিট নগদ প্রবাহ বা নিট মুনাফা নির্ধারণ করা হয়। বিক্রয় থেকে অর্জিত অর্থ হলাে আয় এবং ব্যয় বলতে কাচামাল খরচ, বিক্রয় খরচ এবং অবচয়সহ অন্যান্য খরচকে বুঝায়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে মােট মুনাফা এবং মােট মুনাফা থেকে কর বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট মুনাফা। আবার মুনাফার সাথে অবচয় যােগ করলে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়। এই আন্তঃপ্রবাহের সাথে প্রারম্ভিক বিনিয়ােগ বা নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করা হয়। যদি আন্তঃপ্রবাহ বহিঃপ্রবাহ থেকে বেশি হয় তাহলে বিনিয়ােগটি লাভজনক প্রতীয়মান হয় এবং গ্রহণযােগ্য হিসেবে বিবেচিত হয় অন্যথায় বিনিয়ােগ সিদ্ধান্তটি বর্জন করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া বলা হয়।

খ)নং প্রশ্ন: মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্বঃ

যে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্ব অনেক। অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি হলাে মূলধন বাজেটিং। বিনিয়ােগ প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মূলধন বাজেটিং বাস্তবসম্মত ও সঠিক হলে ব্যবসায়ের অর্জন করা সহজ হয়। অন্যদিকে মূলধন বাজেটিং সঠিকভাবে না। করতে পারলে প্রতিষ্ঠানও ব্যর্থ হয়। তাই সঠিক বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপককে মূলধন বাজেটিং এর উপর নির্ভর করতে হয়। নিচে এর গুরুত্ব আলােচনা করা হলাে:
1. মুনাফা অর্জন ক্ষমতা: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য হলাে মুনাফা অর্জন। তাই মুনাফা অর্জন ক্ষমতার উপর মূলধন বাজেটিং এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ও মুনাফা অর্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত নগদ প্রবাহ পাওয়ার আশায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগযােগ্য সম্পত্তিতে বিনিয়ােগ করা হয়। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অনেকাংশে নির্ভর করে মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের উপর। কনটেকশনারির মালিক ফ্রিজ কেনার ফলে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যবসায়ের মুনাফাও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দোকানির আশেপাশের লােকজন যদি ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খেতে অভ্যস্ত না, হয় সেক্ষেত্রে ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হবে। সুতরাং,সঠিক বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত যেমন ব্যবসায়ের জন্য মুনাফা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে, অন্যদিকে ক্রটিপূর্ণ বিনিয়ােগ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লােকসানের সম্মুখীন হতে পারে। তাই বলা যায়, মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. সঠিক বিনিয়ােগ নিশ্চিতকরণ: পণ্যের ভবিষ্যত চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহন ও ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে হয়। সুতরাং, এটা ভবিষ্যৎ বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু ভবিষ্যৎ পণ্যের চহিদা ও বিক্রয়ের পরিমাণ সঠিকভাবে অনুমান করতে না পারলে স্থায়ী সম্পত্তিতে বিনিয়ােগ কম বেশি হতে পারে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সঠিক বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
৩. বিনিয়ােগের বিশাল আকার : সাধারনত স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, সংযােজন, প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়ন এধরনের বিনিযােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বিপুল পরিমাণ তহবিল প্রয়ােজন হয়। ফলে কোনাে কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন ভুল হলে সংশােধন করার সুযােগ থাকে না। উদাহরণস্বরূপ একটি কোম্পানি ঢাকার অদূরের একটি জায়গায় তাদের কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এই ভেবে যে সেখানে সময়মতাে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সং এবং গ্যাস সরবরাহ পাবে। কিন্তু কারখানা স্থাপনের পর দেখা গেল সরকার নতুন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযােগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে হয়তাে এ কারণে ব্যাংক থেকে বড় আকারের ঋণ নিতে হয়েছে, যার সুদ নিয়মিত পরিশােধ করতে হবে। ফলে এরকম একটি ভুল সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ের লােকসান হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
৪. ব্যয় কাঠামাের উপর প্রভাব: মূলধন ব্যয় সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ব্যয় কাঠামাের উপর প্রভাব বিস্তার করে। একটি প্রতিষ্ঠান পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে চাইলে স্থায়ী ও চলতি সম্পদে বিনিয়ােগ করতে হয়। যেমন: ভূমি, দালান কোঠা, নতুন মেশিন কিনে অধিক ছাতা উৎপাদন করে। উৎপাদনকারীর প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত না হলে আশানুরূপ ছাতার বিক্রি হবে না। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগে ঝুঁকি নিরূপণ ও ঝুঁকির গ্রহণযােগ্যতা যাচাই করতে হয়। এক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ)নংপ্রশ্ন: মুলধন বাজেটিং এর প্রয়ােগ ক্ষেত্রঃ

উত্তর: সাধারনত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর ধারনা প্রয়ােগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্য বাজারজাতকরন সংক্রান্ত সকল প্রকার বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিংয়ের ধারনা প্রয়ােগ করা হয়। নিচে মূলধন বাজেটিং প্রয়ােগ আলােচনা করা হলাে:
1.ব্যবসায় সম্প্রসারণ : যদি কোনাে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বাজারে পণ্যেও চাহিদা বৃদ্ধি পায় তাহলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হয়। আর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানাে বা সম্প্রসারণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক মেশিন ও নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ ফটোকপির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন আর একটি ফটোকপি মেশিন ক্রয় করার চিন্তাভাবনা করতে পারে। নতুন ফটোকপি মেশিন ক্রয় বাবদ কত ব্যয় হবে, ব্যবসায়ের আয় কত বাড়বে এধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জন্য মূলধন বাজেটিং প্রয়ােগ করতে হয়।
২। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় : যে কোনাে নতুন ব্যবসায় শুরু করার সময় স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও যানবাহন ইত্যাদি ক্রয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ রেস্টুরেন্ট মালিককে তার ব্যবসায় শুরু করার সময় চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিল রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় করতে হয়। আবার বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি, দালানকোঠা, কারখানা নির্মাণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ ক্রয় ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এসব স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য মূলধন বাজেটিং প্রয়ােগ করা হয়।
৩)উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও প্রতিস্থাপন : প্রতিনিয়ত আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিস্কার হচ্ছে। ব্যবসায়ের প্রয়ােজনে উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও প্রতিস্থাপনের করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, দর্জির দোকানি পা-চালিত সেলাই মেশিনের পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত সেলাই মেশিন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। সেলুনের মালিক দোকানের সাজসজ্জা পরিবর্তন করে এসি সেলুন বানাতে পারে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলাে উৎপাদন খরচ কমানাে এবং মুনাফা বৃদ্ধি করা। সুতরাং উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়ােগ করা হয়।
৪ পণ্য বৈচিত্রায়ণ : একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য চলমান পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনাে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়নের জন্য কমলার জুসের পাশাপাশি আমের জুস বা আপেলের জুস বাজারে ছাড়ার চিন্তাভাবনা করতে পারে। নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে নতুন পণ্যের কাচামাল খরচ, উৎপাদন খরচ, বাজার চাহিদা, পরিচালনা খরচ, পণ্যের আয়ুষ্কাল, এবং সম্ভাব্য আয় প্রাক্কলন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রেও মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়ােগ করা যায়।
৫। সর্বোত্তম প্রকল্প নির্বাচন: একটি কোম্পানের নিকট অনেক বিকল্প বিনিয়ােগ থাকে এবং অনেক প্রকল্প লাভজনকু হওয়া সত্ত্বেও মূলধনরে সীমাবদ্ধতার কারণে সকল প্রকল্পে বিনিয়ােগ করা সম্ভব হয় না। অনেক প্রকল্পের মধ্য থেকে সর্বোত্তম প্রকল্প নির্বাচন করা একান্ত প্রয়ােজন এবং এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সহজে সর্বোৎকৃষ্ট প্রকল্প নির্বাচন করা যায়। এক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর প্রয়ােগ করা হয়।

ঘ) নং প্রশ্ন: মুলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার ধাপঃ

উত্তর: মূলধণ বাজেটিং হলাে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে অসংখ্য বিকল্প প্রকল্প হতে উত্তম প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে মূলধণ বিনিয়ােগ করা হয়। যেহেতু দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়ােগ করার জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হয় তাই প্রাতিষ্ঠানের সফলতা এর উপর নির্ভরশীল। মূলধন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করা হয়। নিম্নে এর ধাপ গুলাে উল্লেখ করা হলাে:
১. প্রকল্প চিহ্নিত করণ ২. প্রকল্প প্রণয়ন ৩, প্রকল্প মূল্যায়ণ ৪. প্রকল্প নির্বাচন ৫. প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণ ৬. প্রকল্প পূণমুল্যয়ান
১. প্রকল্প চিহ্নিত করণ: মূলধন বাজেটিং এর প্রথম ধাপ হলাে অনেক গুলাে বিকল্প প্রকল্প হতে সর্বোত্তম প্রকল্প চিহ্নিত করে বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। পাশাপাশি বিকল্প প্রকল্প চিহ্নিত করতে হলে গবেষণা ও অনুসন্ধান করা যায় সহজে। আবার কিছু স্বাধীন ও পরিপূরক বা পরস্পর বর্জনশীল প্রকল্পও বিবেচনা করা হয়।
২. প্রকল্প প্রণয়ন: মূলধন বাজেটিং এর দ্বিতীয় ধাপ হলাে প্রকল্প প্রণয়ন। প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে বিনিয়ােগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিবেচনা করাকে প্রকল্প প্রণয়ন বলে। প্রকল্প প্রণয়ন হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন কোনাে প্রকল্প, চলতি কার্যক্রম বর্ধিতকরণ, যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন, পণ্য লাইনে নতুন পণ্যের সংযােজন অথবা উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি। এ পর্যায়ে একটি প্রকল্প প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে এর সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা হয়।
৩. প্রকল্প মুল্যায়ন প্রকল্পের গ্রহণযােগ্যতা বিচার বিশ্লেষণ করাকে প্রকল্প মূল্যায়ণ বলে। দু’টি স্তরে প্রকল্প মুল্যায়ন করা হয়। যেমন: ক. প্রকল্পের আর্থিক মুনাফা ও সম্ভাব্য ব্যয় নিরূপণ করা এবং খ, প্রকল্পের গ্রহণযােগ্যতা যাচাই করার জন্য সঠিক কৌশল বা পদ্ধতি নির্ধারণ করা।
৪. প্রকল্প নির্বাচন: বিনিয়ােগ প্রকল্প নির্বাচন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ এর সাথে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন জড়িত। প্রকল্প চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের জন্য বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হয় এবং “চূড়ান্তভাবে প্রকল্প নির্বাচন সিদ্ধান্ত উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপনা কর্তপক্ষ গ্রহণ করে। বিভিন্ন বিকল্প প্রকল্প হতে যাচাই বাছাই করে লাভজনক ও সর্বোত্তম প্রকল্পটি গ্রহণ ও অনুমােদন করা হয়।
৫. প্রকল্প বাস্তবায়ন: চুড়ান্তভাবে অনুমােদন লাভের পর মূলধণ জাতীয় ব্যয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ স্তরের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে করে বরাদ্দকৃত তহবিল বা মূলধন যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয়ের সাথে প্রকৃত ব্যয়ের তুলনা করা যাতে করে পরবর্তীকালে সংশােধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
৬. প্রকল্প পূর্ণমূল্যায়ন: মূলধন বাজেটিং এর সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা। এ পর্যায়ে যে বিনিয়ােগ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তদারক করা। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন স্তরে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এর কার্যক্রমকে মূল্যায়ন করে থাকে। প্রকল্প মূল্যায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে যদি কোনাে অসংগতি ধরা পড়ে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে সংশােধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ঙ) নংপ্রশ্ন: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং-এর সম্পর্ক ব্যাখ্যাঃ

উত্তর: বিনিয়ােগকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট বিভিন্ন ধরনের অনেক বিকল্প প্রকল্প থাকে। মূলধন বাজেটিং-এর ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্যের বিপণন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়ােগ রয়েছে। মূলধন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের প্রস্তাবসমূহ বা মূলধন বাজেটিং এর আওতা আলােচনা করা হলাে:
1.নতুন বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত: নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়ােগ করতে হয়।
2.সম্পত্তির পুনঃস্থাপন বা প্রতিস্থাপন: দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্থায়ী সম্পত্তির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আবার প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সম্পত্তিকে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এ ধরনের এ ধরনের কার্য সম্পাদনের পূর্বে মূলধন বাজেটিং বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন।
৩. সম্প্রসারণ: ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ প্রয়ােজন হয়। ব্যবসায় সম্প্রসারণ লাভজনক হবে কী না সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং ব্যবহার করা হয়।
৪. গবেষণা ও উন্নয়ন: বর্তমান প্রতিযােগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য একশ্রেণ করতে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে অনেক অর্থ বিনিয়ােগ করতে হয়। এই অর্থ বিনিয়ােগ কোম্পানির জন্য কতটা লাভ জনক হবে তা নির্ধারণ করতে মূলধন বাজেটিং এর সাহায্য নেওয়া হয়। উপরের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়ােগ সিদ্ধান্ত নিতে হলে মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির সাহায্য অবশ্যই প্রয়ােজন।

See More:

এসএসসি 2021 ব্যবসায় উদ্যোগ অ্যাসাইনমেন্ট [৭ম সপ্তাহ] সমাধান। এসএসসি পরীক্ষার্থী-2021

Check Also

তােমার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টিতে যে অনুজীবগুলােকে দায়ী মনে করছ,…..

সপ্তম শ্রেণি 2022 শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর …